পাবনায় চাঞ্চল্যকর ঋণ খেলাপী মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৩৭ কৃষকের জামিন মঞ্জুর
নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীর চাঞ্চল্যকর ঋণ খেলাপি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ১২ জন কৃষকের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। রোববার বেলা ১১ টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আসামীদের জামিন মঞ্জুর করেন। এছাড়াও আসামী ২৫ কৃষকের জামিনও মঞ্জুর হয়েছে।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামানিকের ছেলে আলম প্রামানিক (৫০), মনি মন্ডলের ছেলে মাহাতাব মন্ডল (৪৫),মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩).মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মজনু (৪০) ও মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০),মৃত সোবহান মন্ডলের ছেলে আব্দুল গণি মন্ডল (৫০), কামাল প্রামানিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামানিক (৪৩),মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম (৪৬), লালু খাঁর ছেলে মোহাম্মদ রজব আলী (৪০) সহ গ্রেপ্তারকৃতদের সবাই প্রান্তিক কৃষক।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের দায়ের করা ঋণখেলাপী মামলায় ৩৭ জন আসামীর মধ্যে ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের একটি গ্রুপে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক জন প্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করেন। ঋণ খেলাপির দায়ে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে তৎকালীন ম্যানেজার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
হয়রাণী মামলায় আক্রান্ত একাধিক কৃষক ও তাদের পরিবারের দাবী, ঋণ গ্রহণের পর এক বছরের মাথায় অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণ পরিশোধ করেছেন। তার পাশ বই ও জমা স্লিপও রয়েছে। অথচ সেই অর্থ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে তাদের এই হয়রাণী ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।
জামিনে মুক্ত হওয়া ৬০ বছর বয়সী কৃষক আব্দুস সামাদ প্রামানিক গভীর রাত, আমরা সবাই ঘুমে বিভোর এমন সময় পুলিশ পরিচয়ে দরজায় কড়া, মুহুর্তেই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আটক কওে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ, পরে জেল হাজতে। মুক্ত হয়ে জানতে পারি বসুন্ধরা গ্রুপের সাহয্যে বের হয়েছি, বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করছি তারা যেন এমন হাজার মানবিক কাজের সাক্ষি হয় ।
জামিনে মুক্ত হওয়া আরেক মোহাম্মদ বলেন বসুন্ধরা গ্রুপকে আমরা চিনিনা তারা যে কাজ করেছে নিজের বাপও তা করে না, আমরা তাদের জন্য প্রাণভরে দোয়া করছি।
আদালত চত্বরে বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোস্যাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি, কৃষিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বুধবারে যখন এসকল কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন তখন সবাই এলাকায় শীতের রাতে গাজরের ক্ষেতে কাজ করছিল। বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। বাঁকিরা গ্রেপ্তার আতংকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
তিনি বলেন, যে কৃষক সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদেশের মানুষের খাদ্য পণ্য উৎপাদনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন সেই কৃষককে হয়রাণী মোটেও কাম্যনয়। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই হয়রানীর মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
মামলায় হয়রানীর শিকার কৃষক পরিবারের সদস্যরা মিডিয়ার অগ্রণী ভুমিকার কারণে আজ আমাদের স্বজনেরা আইনী সহায়তা পেয়েছেন দাবী করে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানান সার্বিক ভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে।
বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক মানবিক সহায়তা সংগঠন শুভসংঘ পাবনা জেলা শাখার উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বলেন, কৃষক হয়রাণীর খবর পাওয়ার সাথে সাথে দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মামলার ৩৭ জন আসামী জামিনে মুক্ত হন এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জন আসামী রয়েছে । জামিনের জন্য অর্থনৈতিক সকল সহায়তা প্রদান করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
কালের কণ্ঠ শুভসংঘ পাবনা জেলার শাখার বন্ধুরা জামিনে মুক্ত হওয়া সকল আসামীদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন এবং মিষ্টিমূখ করান । জেল থেকে মুক্ত ১২ জন আসামী দুই হাত তুলে বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যার মহাদয়ের জন্য মোনাজান করে দোয়া করেন । এসময় উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘ পাবনা জেলার শাখার সভাপতি মাহবুবুল আলম ফারুক, সেক্রেটারী গোলাম কিবরিয়া, কেন্দ্রয়ী কমিটির কার্যকরী সদস্য আলী আকবর রাজু, এড. খন্দকার মাহবুব আহমেদ রিটন, এড. মীর রাকিব আলম রিজন প্রমূখ।
মামলার বাদী বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বলেন, কৃষকরা ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা করা হয়। খেলাপী ঋণ আদায়ে এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আমাদের অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা তাদের আইনগত সহায়তা পেয়েছেন।
পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, জামিন হওয়ার পরে কৃষকদের নিয়ে আমি বসেছি। তাদের থেকে সব কিছু শুনেছি। তারা যাতে হয়রানির শিকার না হোন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসায় ইতোমধ্যে বিষযটি নিয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। কৃষকদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়েছে ক্ষতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। কোন কৃষক হয়রানির শিকার যাতে না হয় সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সুমন বলেন, বিচারক গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জন কৃষককে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ২৫ জনের জামিন দিয়েছেন আদালত। বসুন্ধরা গ্রুপের আইনী সহায়তায় সকালে প্রেপ্তারকৃত ১২ জন আসামীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী সাজ্জাদ ইকবাল লিটন ও অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম মোহন। পরে সেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনপ্রাপ্ত ২৫ জন আসামীর পক্ষে প্রধান আইনজীবি ছিলেন এড. তৌফিক ইমান খান অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন এড. খন্দকার মাহবুব আহমেদ রিটন, এড. মীর রাকিব আলম রিজন, এড. ফুলমতি, এড. করিম ও এড. পান্না।