মানুষ পুড়িয়ে মারলে,গ্রেনেড মারা হলে একটাকেও ছাড়ব না: প্রধানমন্ত্রী
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের আপত্তি নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন- কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনো মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা বা এ ধরনের অত্যাচার করতে যায়- তাহলে একটাকেও ছাড়ব না। এটা হলো বাস্তব কথা।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা প্রকারান্তরে নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, ডায়ালগ করতে হবে কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়ার সঙ্গে? সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের সঙ্গেই আবার ডায়ালগ করতে হবে- এটা কেমন ধরনের কথা!
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছে নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যাদের না থাকে, তারা হয়তো নির্বাচন করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে। তারা ভোট দেবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোটচোররা কেবল ভোট চুরি করতেই জানে। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট চুরির জন্য বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে টেনে নামিয়েছিল। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য হয়েছিল। আর ভোট চুরি করলে এদেশের মানুষ মেনে নেয় না।
বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সভা-সমাবেশ করছে, আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল- সেগুলো আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোনো মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!
সহ্য করাকে দুর্বলতা মনে না করতে বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, বিএনপি আমলে আমাদের ওপর যে আঘাত দেওয়া হয়েছে, আমরা তা ভুলিনি। তবে আমরা সহ্য করেছি দেখে যেন এটা মনে না করে যে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। দুর্বলতা নয়। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন মহলের তাগিদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলেন, ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। ওই দুর্নীতিবাজ-সাজাপ্রাপ্ত এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ ও অস্ত্র পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী। আর জিয়াউর রহমান ছিলেন আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে! আলোচনা করতে হবে! আবার মানবাধিকারের কথাও বলেন। এটা কেমন ধরনের কথা- জিজ্ঞাসা করি।
পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল। বেলা আড়াইটায় সম্মেলন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই সারাদেশের ৭৪টি সাংগঠনিক জেলা থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের অন্য সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীও সেখানে সমবেত হন। লাল-সবুজ শাড়ি ও টুপি পরিহিত বিপুল সংখ্যক মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্লোগান ও বাদ্যের তালে নেচে-গেয়ে সম্মেলনস্থল উৎসবমুখর রাখেন নেতাকর্মীরা। দুপুরের আগেই নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় সম্মেলনস্থল ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কে ছড়িয়ে পড়ে।
সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সংলগ্ন এলাকা বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়েছিল। নৌকার আদলে তৈরি বিশাল দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম চলেছে। গোটা উদ্যানে রঙ-বেরঙের বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি শোভা পেয়েছে।
দুপুর পৌনে তিনটায় সম্মেলনস্থলে পৌঁছেই জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। পরে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আরোহণ করলে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
দেশ ও মানুষের উন্নয়নে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে খুনিদের রাজত্ব আর যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব ছিল। আওয়ামী লীগই একমাত্র এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসেছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে।
এ প্রসঙ্গে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের সন্ত্রাস, দুর্নীতি-লুটপাট ও দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কিন্তু বিএনপি কী করে? তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কত মেয়েকে নির্যাতন করেছে? বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই তারা অত্যাচার করেনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছিল, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ঠিক একইভাবে অত্যাচার করেছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা, বিরোধী দলীয় নেতাও কখনো হবেন না। আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহ এ ধরনের গর্বভরা কথা পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। এজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে।
নারীর ক্ষমতায়ন ও কল্যাণে তাঁর সরকারের নানামুখী উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগোবে না। নারী-পুরুষকে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি ও এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করেছি। আজ আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েরা ভালো করে বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। ঘর স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করা হচ্ছে। সেখানে কেউ স্ত্রীকে ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, অনেকে ইসলামের কথা বলে নারীদের অগ্রগতিতে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। সম্পদে স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না।
সন্তানদের বিপথে যাওয়া ঠেকাতে মায়ের বিরাট ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মায়েদের বলব, তাদের সন্তান যেন কোনোরকম জঙ্গিবাদ, মাদক বা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। প্রত্যেক মাকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। তারা যেন নিজের মনের কথা মায়ের কাছে খোলামনে বলতে পারে, সেই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ছেলেমেয়ে কখনো বিপথে যাবে না। তাদের খবর রাখতে হবে। কী করছে, কোথায় যাচ্ছে সেদিকে নজর রাখতে হবে।