৭ বছর শিকলে বাঁধা মানসিক প্রতিবন্ধী সাজেদা
মেহেদী হাসান আকন্দ : নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া নয়াপাড়া গ্রামের মৃত লাল চান মিয়ার মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে সাজেদা আক্তার (১৮)। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে শিকলে বাঁধা রয়েছে সাজেদার জীবন। প্রকৃতির ডাকে অথবা গোসলের প্রয়োজনে শিকলের তালা খুলে প্রয়োজন শেষে আবারো এভাবেই তাকে বেঁধে রাখা হয় নির্দ্দিষ্ট স্থানে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭ বছর আগে স্থানীয় আব্বাস নগর কেজি স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় সাজেদা আক্তার বিদ্যালয়ে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জ্ঞান ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি সাজেদা। দিনমজুর লাল চান মিয়া মেয়ের চিকিৎসায় সবকিছু বিক্রি করে নিস্ব হলেও স্বাভাবিক জীবনে আর ফেরাতে পারেননি। নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি না থাকায় মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে তিনি স্থানীয় পরিত্যক্ত একটি কাচারি ঘরে বসবাস করতেন। ৭ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটি শিকলে বেঁধে লালন পালন করছিলেন। হঠাৎ করেই গত ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে লালচান মিয়া ইন্তেকাল করায় পরিবারটির উপর নেমে এসেছে অ্যামাব্যাসার ঘোর অন্ধকার। মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে ভূমিহীন-গৃহহীন মা হামেদা আক্তার এখন দিশেহারা।
হামিদা আক্তার জানান, দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে সাজেদাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। সুযোগ পেলেই শিকল ভেংগে হারিয়ে যায়। তাকে ফিরে পেতে অনেক খোঁজাখুজি করতে হয়। দিনমজুর স্বামীর আয়েই চলতো তাদের সংসার। বৃদ্ধা হামেদা আক্তার বলেন, ৫ মেয়ে ১ ছেলের সংসারে সাজেদা ছিল সবার ছোট। মেয়েদের বিয়ে সাদি আর সাজেদার চিকিৎসার খরচ জোগাতে সহায় সম্পদ সবকিছু বিক্রি করে আজ আমি নিস্ব। আরেক মেয়েও মানসিক বোধ শক্তি কম হওয়ায় স্বামী তাকেও তালাক দিয়েছেন। সেই তিন বছর বয়সী নাতিসহ তাকেও ভরণপোষণ করতে হয়। নিজের কোনো জায়গা জমি না থাকায় পরিত্যক্ত কাচারি ঘরে মানসিক প্রতিবন্ধী দুই মেয়ে ও নাতিকে বসবাস করতাম। স্বামী মারা যাওয়ার সাথে সাথেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনেকে হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, পাগল এই মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব? তাকে নিয়ে নিয়ে আমি কীভাবে চলবো? মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে নিয়ে মাথা গোজার ঠাই চায় হামেদা বেওয়া।