যোগাযোগে যোগফল বেশ বড়

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সেতুর নাম পদ্মা সেতু। শুধু দৈর্ঘ্যের বিচারে নয়, এই সেতুর সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে কোটি মানুষের আবেগ, তেমনি রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক বিশাল সমীকরণ। দেশপ্রেম আর সম্মানের জেদ তো ছিলই। দেশের সবচেয়ে আলোচিত অবকাঠামো হিসেবেই চলতি বছর উদ্বোধন করা হয়েছে পদ্মা সেতু, যার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

শুধু পদ্মা সেতুই নয়, যোগাযোগব্যবস্থাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশের প্রথম মেট্রো রেল। চলতি বছরই একসঙ্গে ১০০ সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে একসঙ্গে ১০০ সড়কও।

যোগাযোগব্যবস্থাকে আরো সহজ ও দ্রুতগতির করতে পরিবহনকেন্দ্রিক বেশ কিছু বড় প্রকল্পের মধ্যে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষের পথে রয়েছে। এই তিন ধরনের প্রকল্পই দেশে প্রথমবারের মতো হচ্ছে।

পদ্মা সেতু, শত সড়ক, শত সেতুসহ সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প খুলে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতু ও মেট্রো রেল দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। চলতি বছরে একসঙ্গে শত সড়ক ও শত সেতু চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মতো বড় বড় প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। আসছে বছর আরো অনেক প্রকল্প চালু করা হবে।

পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। ৬.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু উদ্বোধন করার ফলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণের ২১ জেলা সড়কপথে যুক্ত হয়েছে।

এর ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের শুধু যাতায়াতই নয়, জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন আসছে। গতি আসছে দক্ষিণের জেলাগুলোর অর্থনীতিতে, যার ইতিবাচক ফল যুক্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিতে।

মেট্রো রেল : আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রো রেলের প্রথম অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন প্রথম যাত্রী হয়ে মেট্রো রেলে উঠবেন তিনি। মেট্রো রেলের উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো পথের দৈর্ঘ্য ২১.২৬ কিলোমিটার। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে ট্রেন চলাচল করবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা এবং পূর্ব প্রান্তে আনোয়ারা এলাকাকে যুক্ত করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। এই টিউবটির অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ঠিক পাশের উত্তর টিউবটি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী যান চলাচল করবে। এই টিউবের সার্বিক নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। আর পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৯৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পের সব কাজ শেষ হওয়ার পরে টানেলের প্রতিটি ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে কাজ করছে কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখে কাজ শেষের ঘোষণা দেওয়া হবে। আশা করছি, জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে শেষ করতে পারব। ’

শত সেতু, শত সড়ক : সড়ক ও মহাসড়কে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বরে একসঙ্গে ১০০ সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। আর ১০০ সড়কের উদ্বোধন করা হয়েছে ডিসেম্বরে। নতুন উদ্বোধন হওয়া এসব সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২০২১.৫৬ কিলোমিটার।

বর্তমানে দেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক আছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮০০টি কালভার্ট এবং সাড়ে চার হাজার সেতু আছে। এই সড়ক নেটওয়ার্কে তিন হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, চার হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক আছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো আরো দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক এবং ১০০ সেতু।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই পুরো পথকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ এই মাসে চালু করার কথা ছিল।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে ৯২ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপের ৪৫ শতাংশ। প্রথম অংশের কাজ শেষের পথে। খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে নেওয়া হবে।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) : এটি বাস চলাচলের জন্য একটি বিশেষায়িত পথ। ঢাকা ও গাজীপুরের মধ্যে দ্রুতগতির গণপরিবহনব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। এরই মধ্যে ঢাকা-গাজীপুরের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রকল্পের একটি উড়ালসেতু আংশিক খুলে দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধ্যবর্তী উভয় পাশের একটি করে লেন শুধু বিআরটি বাস চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার বিস্তৃতি ২০.২ কিলোমিটার।

জানতে চাইলে ঢাকা বিআরটি কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন কাজের গতি ভালো। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পের অধীনে পুরো সড়ক যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। ’

লাখ কোটি টাকার প্রকল্প : পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মেট্রো রেলে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মধুমতী সেতুর নির্মাণ খরচ ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু টানেলের খরচ ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। ১০০ সড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৮২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১০০ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮৭৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প খুলে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

এ ছাড়া রেলওয়েতে চলমান ৩৬টি প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, যোগাযোগ খাতে অনেক প্রকল্প হচ্ছে। প্রকল্পগুলো নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টিও বেড়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে পর্যটনশিল্প যেমন বাড়বে তেমনি মানুষের যাতায়াতও আরামদায়ক হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.