রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে উদ্যোগ কামনা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনের উদ্যোগ কামনা করেছে বাংলাদেশ। সোমবার গভীর রাতে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিং ক্যাং ঢাকায় যাত্রাবিরতিকালে এই সহায়তা কামনা করা হয়। এছাড়াও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়।

চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফ্রিকায় তার প্রথম সফরকালে ঢাকায় এই যাত্রাবিরতি করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। ৫৫ মিনিটের যাত্রাবিরতিকালে বিমানবন্দরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের তরফে বলা হয়, বাংলাদেশ এক চীননীতিতে বিশ্বাস করে। 

বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরকালেও ছিং ক্যাং তার সফরসঙ্গী হিসাবে আমাদের দেশে এসেছিলেন। আমাদের অনেকগুলো ইস্যু আলোচনা হয়েছে। আমাদের বড় ইস্যু হচ্ছে রোহিঙ্গা। এ ব্যাপারে চীন আমাদের সহায়তা করেছে। সেই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে উনি অঙ্গীকার করেছেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। এর মধ্যে আমরা চীন থেকে আমদানি করি ১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ৭৮০ মিলিয়ন ডলার। এটা বাড়ানোর জন্য আমরা অনেক দিন প্রচেষ্টা চালিয়েছি।

এক বছরের মতো হলো, চীন ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে। সেটার গেজেট করেনি। তার ফলে আমাদের ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। আমরা সেটা তুলে ধরেছি। তিনি বলেছেন, অবশ্যই তিনি সেটা করবেন। 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিডের সময় টিকা দিয়ে চীন আমাদের সহায়তা করেছে। সেজন্য ধন্যবাদ দিয়েছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রকম মেগা প্রকল্পে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। সেই কাজগুলো যাতে আরও ত্বরান্বিত হয় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা উন্নয়নের কাহিনি বলেছি। চীনের সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহ দেখিয়েছে।

তারা বলেছে, এটা অভাবনীয়। চীন এ ব্যাপারে সহযোগী হিসাবে কাজ করতে চায়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। আর্থিক লেনদেন সমস্যা হচ্ছে।

একটা নতুন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ। সুখের বিষয় হলো, চীন আমাদের উন্নয়নের মহাসড়কে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের কিছু সমস্যা আছে। তাদের মধ্যে বেশ অসুবিধা আছে। সেজন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তবে তিনিও আশাবাদী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, সমস্যাটার তাড়াতাড়ি সমাধান না হলে উগ্রবাদের আশঙ্কা রয়েছে। এরা বাস্তুচ্যুত মানুষ। এদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সেজন্য তারা উগ্রবাদে জড়াতে পারে। এতে পুরো অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবে। সেজন্য আপনারা বিশেষ উদ্যোগ নিন যাতে সমস্যাটার তাড়াতাড়ি সমাধান হয়। অন্তত প্রক্রিয়াটা শুরু হওয়া উচিত। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে একমত হয়েছেন। 

ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা বিভিন্ন রকমের গুরুত্ব পাচ্ছি। এটা সুসংবাদ। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা এসেছেন। এই মুহূর্তে এখানে আছেন। অন্যান্য দেশও আমাদের এখানে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমাদের দিকে অনেকে নজর দিচ্ছেন। আমাদের দেশ এ বছর ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসাবে ঘোষিত হয়েছে। তার মানে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। কেউ এগুলো হতছাড়া করতে চান না। সেজন্য আসছেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরাও অধিক হারে সম্পৃক্ত হতে চাই। মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি এই মুহূর্তে শহরে আছেন। আরও অনেকে আসবেন। তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। আমরা সেই সম্পর্ককে আরও জোরদার করব। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে রাখা হচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। আমাদের পলিসি হলো, সবার সঙ্গে বন্ধু, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা এটাতে বিশ্বাস করি। 

নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আপনারা বেশি বেশি আলাপ করেন। নির্বাচন এক বছর পরে হবে। অনেক দিন বাকি।

এগুলো নিয়ে আপনারা খামোখা বেশি বেশি হইচই করেন। আমাদের দেশটা গণতান্ত্রিক দেশ। গত ১৪ বছরে কত নির্বাচন হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। এই সেদিন যে নির্বাচন হলো সেটা খুব সুষ্ঠু হয়েছে। অন্যরা আমাদের পরামর্শ দিতে পারেন।

তবে কেউ সুপারিশ করে আমাদের দুর্বলতা দূর করতে পারবে না। আমাদেরই করতে হবে। আমাদের দেশের সব জনগণ, সব দল, সরকার পক্ষ, বিরোধী পক্ষ মিলেই উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। অন্য কেউ পারবে না।

অন্য কেউ হয়তো আমাদের দোষটা ধরিয়ে দিতে পারেন। এ পর্যন্তই। কিন্তু কাজটা আমাদেরই করতে হবে। সরকার স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে চায়। কারণ শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। সেজন্য আমাদের বিশ্বাস জনগণ আমাদেরই আবার নির্বাচিত করবে’।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.