আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলামের সেবক:মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সবসময় ইসলামের সেবক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস খেলা বন্ধ করেন, মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করেন। ইসলামের চর্চা সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড গঠন করেন। তিনিই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও বিশ্ব ইজতেমার জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দেন।
গতকাল সোমবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় দফায় ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য হয়। বিশ্ব ইজতেমা যেন বাংলাদেশে হয়, তারও উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর এটা হওয়ার অধিকার আদায় করে আনেন। তিনি বলেন, এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো থেকে জনগণ ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করবে, যা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারী নির্যাতন বন্ধে ব্যাপক অবদান রাখার পাশাপাশি ধর্মের নামে বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সরকার চলে বলেই ইসলাম ধর্ম এবং শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় এবং দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরে একটি করে মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ যেন মানুষকে বিপথে নিতে না পারে এবং প্রকৃত ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষের মাঝে যেন সচেতনতার সৃষ্টি হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেই এই মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প আমরা নিই এবং নির্বাচনী ইশতেহারেও সেটার ঘোষণা দিই।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক সমাজ ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে—এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যেন ছেলেমেয়েরা বিরত থাকে, এটা যে ইসলাম ধর্মের প্রতি কোনো সম্মান নয়, বরং ইসলামের বদনাম হয় সে বিষয়টার দিকে সবাই যাতে সচেতন হয়। নিজেদের সন্তানদের দিকে নিজেরা যেমন, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও তাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি লক্ষ রাখবেন। আপনাদের ছেলেমেয়ে কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে—জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে যেন কোনোভাবে সম্পৃক্ত না হয়।
করোনাভাইরাস অতিমারি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে যেমন বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছেন, তেমনি সমাজের একেবারে নিম্নস্তরের মানুষকেও নগদ অর্থ এবং খাদ্য সাহায্য দিয়েছেন। সেইসঙ্গে দেশের প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩টি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অনুকূলে ৫ হাজার টাকা হারে ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা তার সরকার অনুদান হিসেবে দিয়েছে। পাশাপাশি করোনাকালীন কওমি মাদ্রাসার আয়ের পথ রুদ্ধ হওয়ায় দেশের ১৩ হাজার ৯৪৪টি কওমি মাদ্রাসায় ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটুকুই চাই, আমাদের দেশে সত্যিকারের ইসলামের জ্ঞান চর্চা হোক। কেননা, আমরা ২৭ হাজার ৮৩২টি মসজিদ পাঠাগার স্থাপন করেছি। তাছাড়া মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ২ হাজার ৫০০টি নতুন পাঠাগার স্থাপনে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ লাখ ১২ হাজার ৬৪৭ জন ইমামকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, ৯৫ হাজার ৮৫ জনকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ৩৪ হাজার ৩২৩ জন ইমামকে অন্যান্য প্রশিক্ষণ এবং ৩ হাজার ৬১৩ জন ইমামকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান থেকেও যেন কেউ দূরে না থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টির মধ্যে ১০০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছিল। আশা করা হচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হবে।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য দেন।