রিজার্ভের ডলার দিয়ে চার ভোগ্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রমজান সামনে রেখে চার ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই চারটি পণ্য হচ্ছে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা ও মসুর ডাল। এসব পণ্য আমদানির এলসি খুলতে যাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হয়, সে বিষয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিঠি পাঠানোর বিষয়টিও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রোজার পণ্য আনতে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নাই। রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে আজকে (গতকাল) চিঠি তৈরি করা হচ্ছে। আগামীকালই (আজ) বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। সূত্র জানায়, সরকারের জরুরি পণ্য হিসেবে জ্বালানি তেল ও সার আমদানির ক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনে ডলার সহায়তা দেওয়া হয় এলসি খুলতে। রিজার্ভ ভেঙে ভোগ্যপণ্য আমদানির নজির নাই। সংকট এত বেশি যে, এ সংক্রান্ত জরুরি সভার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে নিত্যপণ্য এলসি ও আমদানি পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ে গতকাল বিকালে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যগুলোর এলসি কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নিত্যপণ্যের এলসি করতে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠালেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাড়া দিচ্ছে না বলে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের তথ্যে উঠে আসে। এর ফলে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করতে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছি, ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলেছি। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি হচ্ছে- ভোগ্যপণ্য আমদানিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেই ডলার দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সাপোর্ট দেবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু সার ও জ্বালানি আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে প্রয়োজনে ডলার সহায়তা দেয় (ব্যাংক না দিতে পারলে)। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের জন্য তারা দেবে না। এখানে আমরা আটকে যাচ্ছি। আজকে আমরা বলেছি, অন্তত রমজান মাসকে সামনে রেখে হলেও চারটি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে হবে। না হলে পরে রমজানে আমরা পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে পারব না। সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি পণ্য আমদানি কমে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে চিনি আমদানি। আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২ লাখ মেট্রিক টন চিনি কম এসেছে। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স সভার জন্য তৈরি করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৪৫ মেট্রিক টন চিনি আমদানি কমেছে। একই সময়ে ক্রুড পাম অয়েল আমদানি কমেছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন, ছোলা আমদানি কমেছে ১৪ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত পামতেল আমদানি হয়েছে ১২ হাজার মেট্রিক টন, আগের বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪৭৩ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি হয়েছে, আগের বছর একই সময়ে এ পণ্যটি আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন। খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, রোজার মাসে ডাল, ছোলা, চিনি, তেলের চাহিদা বেশি থাকে। গত বছর যে পরিমাণে এসব পণ্য এসেছে, এবার তার চেয়ে কম আসছে। গতবার একটি জাহাজ সমুদ্রে, একটি জাহাজ বন্দরে থাকার পরও এক জাহাজের মাল গোডাউনে থাকত। এবার গোডাউনে মাল নাই। জাহাজ ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে।