সামরিক আমলের আইন পরিবর্তনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সামরিক শাসনামলে জারি করা আইনগুলো পরিবর্তন করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আছে। তবে আইনগুলো পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। তাই সামরিক শাসনামলে জারি করা আইনগুলো দ্রুত পরিবর্তনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। বৈঠক শেষে তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ছিল সামরিক শাসনামলে জারি করা আইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে। যেগুলো সামরিক শাসনামলের আইন বলে চিহ্নিত হয়েছিল, সেগুলোর পরিবর্তনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে বাকি যেগুলো আছে, সেগুলোর পরিবর্তন প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলো দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। কতটি আইনে পরিবর্তন বাকি আছে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে ১০-১২টি হবে।’ তবে সবই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনোটির কাজ থেমে নেই। দেখা গেছে এসব আইন মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে গেছে। হয় সংসদে আছে, কিংবা ভেটিংয়ের পর্যায়ে আছে।
আয়কর আইনের খসড়া অনুমোদন : আয়কর আইন, ২০২৩-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এ আইনের ফলে কর দিতে মানুষের হয়রানি কমবে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। এখন ব্যবসায়ীদের রিটার্নের ক্ষেত্রে ২৯টি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুন আইনে তা কমিয়ে ১২টি করা হয়েছে। মানুষ যাতে কর দিতে উৎসাহিত হয় এবং করের পরিধি যাতে বাড়ে সেজন্য এ আইনটি করা হয়েছে। করদাতার করের পরিমাণ আয়কর কর্মকর্তার নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকছে না এ আইনে। করদাতার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কর নির্ধারিত হবে। ফলে কর্মকর্তার চাপিয়ে দেওয়া করের পরিমাণ ঠিক করার ফলে আপিলের পরিমাণ কমবে, কমবে করদাতার হয়রানি। তিনি বলেন, আয়কর আইন, ২০২৩-এ মূলত আগের আইনটিকে সহজ করা হয়েছে। আসলে জটিলতাগুলো দূর করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সহজ করা হয়েছে। আইনটিতে ৩৪৮টি ধারা আছে। অনেক বড় আইন।
এটুআই এজেন্সি হচ্ছে : তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য ‘এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই)’ গঠন করছে সরকার। এজন্য এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) আইন, ২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটুআই প্রথমে ছিল অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন, এরপর অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট, এখন এসে বলছি এজেন্সি টু ইনোভেট। এটি আগে ছিল প্রকল্প। এজেন্সি হিসেবে গঠনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন করতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা আইনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। যে এজেন্সি গঠিত হবে তা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের একটা পলিসি তৈরি বা ইনোভেশনকে উৎসাহিত করবে- এ রকম একটা পরিবেশ তৈরির জন্য সহযোগিতা দেবে। এজেন্সিটি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনীর সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করবে। আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন; দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অগ্রসর প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রণোদনা এবং জনসচেতনতা ও চাহিদা সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান; জনকল্যাণে প্রযুক্তিবিষয়ক উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণায় উদ্ভাবিত পণ্য ও সেবার মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ; শিল্প, শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবীসহ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারত্ব সৃষ্টি করা হবে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এজেন্সি পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড থাকবে। বোর্ডের সভাপতি হবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। আর একটি থাকবে নির্বাহী কমিটি। সেখানে ওই বিভাগের সচিব সভাপতি হবেন। এ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যে রকম সাংগঠনিক কাঠামো থাকে সেভাবে পরিচালিত হবে। বর্তমানে এটুআইর জনবল একটি প্রকল্পের মধ্যে আছে, তারা রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনের মধ্যে জনবল স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো কিছু নেই। চাকরির শর্তাবলি প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। এজেন্সিতে সরকারের ক্ষমতা কেমন থাকবে- এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘এটা অনেকখানি স্বায়ত্তশাসিত হবে। তারা যে ক্ষেত্রে কাজ করবেন সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করবেন। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে বিধিবিধান আছে সেটা তারা ব্যবহার করবেন। এখানে যারা চাকরি করবেন তাদের কাঠামোটা ভিন্ন। তারা বেসরকারি খাতের সঙ্গে ক্লোজলি কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বহুমুখীকরণের যে পরিকল্পনা করেছেন। তিনি মনে করছেন গার্মেন্টসের পর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি এবং ফুড প্রসেসিং। আমরা ইনোভেশনকে উৎসাহিত করব তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে। ফলে এই প্রতিষ্ঠান সেই লক্ষ্য অর্জন এবং স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে।’
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৬৭.৭৮ শতাংশ : গত বছর চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৯০টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৬১টি। ২৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং ১১টি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদিত হয়েছে। এই সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে চারটি।’