পাতালরেলের যুগে বাংলাদেশ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে মহাকাশ জয়, বিশাল সমুদ্রসীমা জয়, যানজটের শহর রাজধানীতে স্বপ্নের মেট্রোরেলের পর এবার পাতালরেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে এটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থা এখন এক নতুন বিপ্লবের উদাহরণ। ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম পাতালরেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চিতলগঞ্জে ডিপোর নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে প্রকল্পের শুভসূচনা করবেন সরকারপ্রধান। সকাল ১০টায় পূর্বাচলে জনতা উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন মাঠে সুধী সমাবেশ ও জনসমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সমাবেশ থেকে তিনি এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক লোকের সমাগমের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে, ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার লাইনের দুটি অংশ থাকবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর (বিমানবন্দর রুট) পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ ভূগর্ভস্থ হবে এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল (পূর্বাচল রুট) পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে লাগবে ২৪ মিনিট। বিমানবন্দর রুটে ১২ ও পূর্বাচল রুটে ৯টি স্টেশন থাকবে। পূর্বাচল রুটের নর্দ্দা ও নতুনবাজার স্টেশন থাকবে ভূগর্ভে এবং এ দুটি স্টেশন যাত্রীদের রুট পরিবর্তনের জন্য ইন্টারচেঞ্জ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের এ প্রকল্পটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-১ বা এমআরটি লাইন-১ নামে পরিচিত। এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এ রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। সাশ্রয় হবে রাজধানীবাসীর কর্মঘণ্টা। এমআরটি লাইন-১-এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিন তলা। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেসমেন্টে। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে সাবওয়ে (পাতালরেল) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২ ফেব্রুয়ারি এ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মহাকাশ জয় করেছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পাঠানো হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধে না গিয়ে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে যানজটের নগরীতে স্বপ্নের মেট্রো চালু হয়েছে।
তাঁর নেতৃত্বে এখন আমরা পাতালও জয় করব।’ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষের বাস। সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে এ জনগোষ্ঠী আজ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পরিণত হয়েছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে। এতে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বিস্তৃৃত যোগাযোগব্যবস্থা। সড়কপথ তো বটেই উড়ালসড়ক হয়ে এখন পাতালসড়কও নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশে। আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হওয়ার পর টানা ১৪ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এ সময়ের মধ্যে মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশে। অর্থনীতিতে গতি আনতে দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বড় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, একটি রুট বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩-খিলক্ষেত-নর্দ্দা-নতুনবাজার-উত্তর বাড্ডা-বাড্ডা-আফতাবনগর-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে। এটিই মূলত পাতালপথের রুট। উড়ালপথের রুট নতুনবাজার থেকে শুরু হয়ে নর্দ্দা-জোয়ারসাহারা-বোয়ালিয়া-মস্তুল-শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম-পূর্বাচল সেন্টার-পূর্বাচল পূর্ব-পূর্বাচল টার্মিনাল হয়ে পিতলগঞ্জ ডিপোয় গিয়ে শেষ হবে। এমআরটি লাইন-১-এর পুরো পথে থাকবে ২১টি স্টেশন। দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬-এর একাংশ ২৮ ডিসেম্বর চালু হয়েছে। উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাতালরেল আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি নতুন যুগে আবদ্ধ করবে। মানুষ কম খরচে শহরের বাইরে থাকতে পারবে এবং অফিস ও অন্যান্য কাজে সহজে ঢাকায় আসতে পারবে। এতে অনেক বাণিজ্যিক উন্নয়ন ঘটবে এবং রুটের চারপাশে সুবিধাগুলোর ভাড়া এবং মূল্য বাড়বে। আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য পুনর্নির্মাণ করা হবে। এতে ওইসব এলাকায় বসবাসকারী লোকজন কম ভাড়ার জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হবে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ কেন্দ্রীয় শহর থেকে বিকেন্দ্রীভূত হবে। টেকসই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি বাস্তবায়নাধীন ও পরিকল্পনাধীন কার্যক্রম শেষ হলে দৃশ্যমান হবে যোগাযোগ খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন।