বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পোশাক নেওয়ার প্রতিশ্রুতি

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পরিমাণে পোশাক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে ওই সব দেশের ক্রেতাদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। পরিবেশ সুরক্ষা, শ্রমিকদের যত্নসহ উৎপাদন কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রেই এ দেশের পোশাক খাত এখন অন্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

শনিবার নারায়ণগঞ্জে দুটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষে এসব মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ১৮ দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর আয়োজনে এই পরিদর্শনে কয়েকটি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। পোশাক কারখানায় সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শতভাগ নিয়ম মানার চর্চা সম্পর্কে সংশ্নিষ্টদের অবহিত করার অংশ হিসেবে এই আয়োজন করা হয়। এতে সহায়তা দিয়েছে পোশাক খাতের নিট পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ।

সকালে ৩০টি গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দুপতারায় মিথিলা টেক্সটাইল মিলসে এসে পৌঁছায় প্রতিনিধি দলটি। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এবং মিথিলা টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আজহার খান প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। এর পর কারখানার বিভিন্ন বিভাগের উৎপাদন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন তাঁরা। কারখানাটি জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (লিড) মধ্যে সর্বোচ্চ মান প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত। কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, তাঁদের অধিকার চর্চার সুযোগ- এসব সূচকে যাচাই-বাছাই করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) লিড সনদ দিয়ে থাকে।

পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা, শ্রমিক-কর্মচারীদের যত্নসহ উৎপাদন কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রে এত সহায়ক পরিবেশ আমি আগে কখনও কোথাও দেখিনি। এই উদাহরণ পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর জন্য প্রকৃতই অনুপ্রেরণার।’ হোহাইটলি বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান বাজার হিসেবে ইইউ গর্বিত। ইইউভুক্ত দেশগুলো গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৯ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক নেওয়ার তথ্য জানান তিনি।

এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের নিরাপত্তা মানের যে উন্নয়ন তা বিশ্ববাসীকে জানানো হবে। এর অংশ হিসেবে, ক্রেতা প্রতিনিধি ও মিডিয়াকে নিয়ে এই আয়োজন করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।

এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, উৎপাদন কার্যক্রমে সবুজ এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। সারা বিশ্বে পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি লিড সনদের কারখানা এখন বাংলাদেশে। এ পর্যন্ত ১৮৪টি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরও ৫০০ কারখানা। মিথিলা টেক্সটাইলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধান থেকে তুষ এবং তুষ পুড়িয়ে স্টিম উৎপাদন করে তা গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের এই প্রযুক্তিই তার বড় প্রমাণ। বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনে আগামীতে এ ধরনের বিকল্প জ্বালানির আরও কারখানা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সময় স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ও মিথিলা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

মিথিলা টেক্সটাইলস পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশন পরিদর্শনে আসে প্রতিনিধি দলটি। সুবিশাল কারখানাটির বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন তাঁরা। পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জার্মানির রাষ্ট্রদূত অ্যাইকেম ট্রসটার জানান, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা মান নিয়ে তাঁরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এ দেশ থেকে আরও বেশি পরিমাণে পোশাক নেবে তাঁর দেশ। এ ব্যাপারে জার্মানির ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত স্পেন রিকটার ভেন্ডসেন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি, ঢাকায় থাইল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পেনোম থংপ্রেউন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রতিনিধিসহ এসব দেশের কয়েকটি ক্রেতা ব্র্যান্ড প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.