রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘অমূল্য সম্পদ’: প্রধানমন্ত্রী

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীকে জাতির একটি ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে জনগণ দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। বুধবার রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি হামিদের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, পরপর দুই মেয়াদে তিনি (আবদুল হামিদ) রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সংবিধান অনুযায়ী তিনি আর রাষ্ট্রপতি হবেন না। একটি অমূল্য সম্পদ (তার আত্মজীবনী-‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’) তিনি আমাদের দিয়েছেন। তার জীবনের অনেক কিছু আমরা জানতে পারি, যা তিনি আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে তার বাকি জীবন, বিশেষ করে যখন তিনি অবসরে যাবেন তখন রাষ্ট্রপতি হিসাবে যে সময় অতিবাহিত করেছিলেন তা লিখে রাখার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ শিরোনামের আত্মজীবনী বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত। অপর বইয়ের দুটি অংশের সংকলন ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ শিরোনামে রাষ্ট্রপতির ভাষণ।

বইয়ের আলোচনা পর্ব শেষে বিশিষ্ট অতিথি ও সংসদ-সদস্যদের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজ ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রবীণ সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ-সদস্যগণ, বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি ও তার পত্নী তাকে স্বাগত জানান।

পড়াশোনায় ছেলেদের আরও মনোযোগী হওয়া দরকার : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা পাশ করতে পারেনি, তারা যেন মন খারাপ না করে। সামনে ভালো করার জন্য নতুন করে যেন উদ্যোগ নেয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন ফেল করবে? তিনি বলেন, আমি দেখলাম পাশের হারে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এর মানে, ছেলেদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হওয়া দরকার। আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব মেধাবী, একটু সুযোগ পেলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে ২০২২ সালের মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার হার বর্তমানে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে আরও বাড়াতে হবে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা শিক্ষার হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করলেও বিগত বিএনপি সরকারের সময় এ হার কমে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে। তবে আমরা বিএনপি সরকারের আমলের শিক্ষার হারকে বাড়িয়ে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী সময়মতো পরীক্ষা আয়োজন ও ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতাবলেছিলেন তার ‘সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই। সেক্ষেত্রে আমাদের আজকের ছেলেমেয়েরাই তো সোনার মানুষ। তিনি বলেন, বোর্ড পরীক্ষার পর অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের বুনিয়াদি ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। যাতে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। তাহলে তারা দেশ-বিদেশে চাকরি পেতে সুবিধা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিএ, এমএ পাশ করলে হবে না, একই সময়ে তাদের তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ, বর্তমান যুগটা ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ। প্রধানমন্ত্রী গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি, এটা গবেষণারই ফসল। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও কৃষির বর্তমানে যে গবেষণা চলছে, এর সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তিনি গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী সম্মিলিত ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। পরে একে একে ১১টি শিক্ষা বোর্ড-নয়টি সাধারণ বোর্ড, একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় ৬ নভেম্বর সারা দেশে স্বাভাবিক পরিবেশে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং শেষ হয় ২২ ডিসেম্বর। মাত্র ৫৭ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হলো। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। এর প্রধান হাতিয়ার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। তাই সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা অনেক মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। শিক্ষকদের সরকারি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।

এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০২১-২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলোয় এসডিজির এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করে আমরা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বুধবার বেলজিয়ামের রানি এবং জাতিসংঘের এসডিজিবিষয়ক বিশেষ দূত ম্যাথিল্ড ম্যারি ক্রিস্টিনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্ব অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কারণ, এ যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। রাজনীতি, প্রতিরক্ষা ও বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা রানিকে অবহিত করেন। নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নারী শিক্ষার প্রসারে তার সরকারের প্রচেষ্টার কথাও সংক্ষেপে তিনি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তার সরকার সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ নারীদেরও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এনেছেন। এর মধ্যে বয়স্ক নারী, বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্ত নারীও রয়েছে। তিনি বলেন, ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। তিনি আরও বলেন,

কক্সবাজার ক্যাম্পে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে কয়েক হাজার গর্ভবতী নারীকে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য দুর্যোগে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.