এ বছরই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সুন্দর ঝকঝকে নতুন বাড়ি। বাড়ির নামফলকে লেখা ‘বীর নিবাস’। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্যই এ প্রকল্প সরকারের। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের আওতায় এ বছরই ৩০ হাজার বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার পাঁচ জেলায় পাঁচ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে এই নিবাসের চাবি হস্তান্তর করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিবাসের চাবি হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবন যাপন করবেন না। যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তরুণ প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সারা দেশের অনাবিষ্কৃত বধ্যভূমিগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এই বাংলাদেশের ওপর আর কারো কালো থাবা যেন না পড়ে, সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকারও আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে বা মানবেতর জীবন যাপন করবে, অন্তত আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁদের ঘরবাড়ি নেই এবং মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন, সেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে তাঁদের জীবন-জীবিকা ও চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, আজ ‘বীর নিবাস’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমি আশা করি, আরো যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা বাকি আছেন তাঁদের সবার জন্যই এই ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। সাধারণ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের জন্যও সরকার ঘর করে দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ পাঁচ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বীর নিবাস হস্তান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান। আশা করি, এ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার বীর নিবাসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে; যদিও করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের খুবই হিসাব করে চলতে হচ্ছে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ চার হাজার ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর।
প্রতিটি নিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একতলার এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাবারঘর (ডাইনিংরুম), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার থাকছে। প্রতিটি বাড়িতে থাকছে একটি উঠান, একটি নলকূপ এবং গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড। প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে যে বিজয় অর্জন করেছি, সেটা যেন মানুষ ভুলে গিয়েছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল, তারাই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা হয়ে ক্ষমতায় বসে। স্বাভাবিকভাবে তখন মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হলে চাকরিও দেওয়া হতো না। এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশ ছিল ২১ বছর।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই ১৫ ফেব্রুয়ারি একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, যে নির্বাচনে ২ শতাংশ ভোটও পড়েনি। সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে—এই ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে অনেক সচেতন। তাদের ভোট চুরি হয়েছিল বলে আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সে জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করার একটা দিন।’ অনুষ্ঠানে বত্তৃদ্ধতা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া।