‘নারীরা মেধা ও শ্রম দিয়ে সভ্যতার সকল উন্নয়নে সমঅংশীদারিত করেছে’
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে নারীরা সমঅংশীদারিত্ব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার (৮ মার্চ) ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে এ মন্তব্য করেন তিনি। বাণীতে বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী আন্দোলনের ইতিহাসে আজ এক গৌরবময় দিন। দীর্ঘ কর্মঘন্টা আর মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারী আদায় করেছিল তার অধিকার।’
তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৮ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস সীমিত থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কাক্সিক্ষত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চারটি ভিত্তি- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন। তিনি জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে প্রতিটি কাজে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন হচ্ছে, লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে থাকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ। নারীর দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ভিজিডি কর্মসূচি, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি, মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য নারী-পুরুষ সবাইকে আমরা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসেছি। নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও উদ্যোক্তা তৈরিতে জয়িতা ফাউন্ডেশনের অনলাইন মার্কেট প্লেস ‘ই-জয়িতা’ চালু করা হয়েছে। নারী পাচার, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ নারীর প্রতি যে কোন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে কঠোর আইন ও নীতি।
শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্বে, সংসদে, নীতি নির্ধারণে, রাজনীতি থেকে প্রশাসনে, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায়, বিদেশে শান্তি রক্ষায়, গবেষণা থেকে খেলাধুলা, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পর্বতারোহণ প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি এদেশের নারী আজ স্বীয় প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। জেন্ডার বাজেটিং, মাইক্রো ফাইন্যান্স, ই-কমার্স এর মতো উদ্যোগগুলো নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য অর্জিত হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ পুরস্কার। নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে আমরা অর্জন করেছি জাতিসংঘ কর্তৃক ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড। শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ এবং গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ লাভ করেছি। দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা ও সবার জন্যে শান্তি-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করায় ২০২১ সালে অর্জিত হয়েছে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেমন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি তেমনিভাবে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ।’ তিনি ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।