শেখ হাসিনা শুনছেন তৃণমূলের কথা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গণভবনে ডেকে এনে তাদের অভাব, অভিযোগ ও উপলব্ধির কথা শুনছেন দলীয় প্রধান। পদধারীদের পাশাপাশি দুর্দিনের ত্যাগী কর্মীদের কথাও শুনছেন তিনি। কথা বলছেন সদ্য সাবেক নেতাদের সঙ্গেও। অনেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলীয় নেতাদের দূরত্বের কথা তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনা কোনো কোনো অভিযোগের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, আবার কিছু অভিযোগ নোট করে রাখছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনার শুরুতে নেতাকর্মীদের শারীরিক ও পারিবারিক খোঁজখবর নিচ্ছেন দলীয় প্রধান। সবার বক্তব্য শোনার পর তিনি আগামী দিনে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সর্বশেষ বুধবার বিভিন্ন এলাকার নেতাদের সঙ্গে বসেন তিনি। সেখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবারের বৈঠকে কুড়িগ্রামের এক নেতা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সদস্য সাখাওয়াত হোসেন শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। চট্টগ্রামের এক নেতা অভিযোগ তোলেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নূরুল হুদা মুকুটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ ছাড়া আরও অন্তত
পাঁচ জেলার নেতা স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। এ সময় শেখ হাসিনা জানতে চান, নদভী ও মুকুটের বিষয়ে আগে কেন অভিযোগ জানানো হয়নি। অন্যদিকে সাখাওয়াত হোসেন শফিকের অভিযোগ নোট করে রাখেন শেখ হাসিনা।
বুধবারের বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৩০ মার্চ ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, বরগুনাসহ কয়েকটি অঞ্চলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। ওই দিন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকেও ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গণভবনের একটি সূত্র জানায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ৩ এপ্রিলের বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পদহীন অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তারা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অস্বচ্ছ রাজনীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব জানি।’
এসব বৈঠকের বিশেষত্ব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এর বিশেষত্ব বা উদ্দেশ্য হলো- আগামীর জন্য দলকে সুসংগঠিত করা। বিশেষ করে দলের মধ্যে যদি কোনো কোন্দল থাকে, বা কোনো দ্বন্দ্ব থাকে, তা মিটিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। বিএনপি-জামায়াত সম্ভাব্য যা যা করতে পারে, সেসব ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ করে দেওয়াও এ বৈঠকের একটি উদ্দেশ্য।’
সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান মনে করেন, ‘এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে নেত্রী তৃণমূলের ভেতরে যেতে চান। সঠিক তথ্য-উপাত্ত তুলে এনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে কাজে লাগাতে চান।’ সিলেট বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘কর্মীরা কাছে এলে নেত্রী আনন্দ পান এবং কর্মীরাও উচ্ছ্বসিত হন। নেত্রীর নির্দেশনা পেয়ে বিভেদ ভুলে স্থানীয় রাজনীতিতে মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়।’
রাজশাহী বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা হয় না। সামনা-সামনি কথা হয় না। জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বক্তব্য শুনছেন। একই সঙ্গে নেত্রী নিজেও একটা গাইডলাইন দিচ্ছেন। নেত্রী কোন অবস্থা থেকে দেশকে কোন অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছেন, তারও একটা ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিয়ে যাচ্ছেন, যা জনসাধারণকে বোঝানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের পরিপূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস ও প্রত্যাশা প্রিয় নেত্রীর ওপর। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল পরিবার। তিনি এই পরিবারের অভিভাবক। তার নিকট সবাই সবকিছু বলতে চান। সমস্যা সমাধানে তার অসাধারণ সক্ষমতা। সুতরাং তার নিকট সবাই সমস্যা ও প্রত্যাশার কথা বলতে স্বস্তিবোধ করেন। তিনিও যত্ন সহকারে সবার কথা শুনে নানামুখী সমাধান দেন। যা অন্যদের দ্বারা সম্ভব নয়। মাননীয় সভানেত্রীর এই কর্মপদ্ধতি দলের ঐক্য বজায় রাখতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে এবং দলকে গতিশীল করে।’
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে দলের কোন্দল বা মতবিরোধ যেন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সে জন্য নেত্রী তৃণমূলের কথা শুনছেন।’ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এসব বৈঠক ধারাবাহিকভাবে চলবে। এসব মিটিংয়ে বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ডাকা হচ্ছে না। এমনকি থাকছেন না দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও।