ট্রাস্টের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হচ্ছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে ট্রাস্ট ও ট্রাস্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিপরীতে কর বিবরণী (রিটার্ন) দাখিল বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ট্রাস্ট গঠন করে বিভিন্ন কোম্পানির কর ফাঁকি রোধ করার লক্ষ্যে সরকার এ বিধান চালু করতে যাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানি কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নামে ট্রাস্ট গঠন করে। পরে নিজস্ব আয় গোপন করে ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করে। এর মাধ্যমে অনেক ট্রাস্ট এবং ট্রাস্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকির ক্ষেত্র তৈরি করছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাস্ট এবং ট্রাস্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেনের বিষয়াদি নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্সি না থাকায় ট্রাস্টের অর্থ সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন এবং অর্থ পাচারেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব অনিয়ম বন্ধে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ট্রাস্টের আয়ের বিপরীতে কর বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য বাজেটে ট্রাস্টের আয়ের বিপরীতে সবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চলমান রাখা এবং এর রিটার্ন দাখিল ও যাচাই করার বিধান প্রবর্তন করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী ট্রাস্ট একটি করযোগ্য সত্তা। কিন্তু ট্রাস্টগুলো নিয়মিতভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধের বিধান পরিপালন করছে না। আগামী বাজেটে ট্রাস্টের আয়ের বিপরীতে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আহরণে তলানিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাই ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্য দিয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির শর্ত মোতাবেক ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এই অনুপাত ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে। সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ই-পেমেন্ট, ই-রিটার্ন ফিলিং, ই-টিডিএস, ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ই-টিআইএন সিস্টেম।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৬টি রিটার্ন জমা পড়েছে। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে জমা পড়েছে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ২১৫ রিটার্ন। সে হিসেবে এক বছরেরও কম সময়ে সাত লাখের বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে।

এনবিআর মনে করে, বর্তমানে ৩৮ ধরনের সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় আয়করদাতার সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে এনবিআর ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের সঙ্গে যৌথভাবে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) চালুর বিষয়টিও কর আহরণ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এর আগে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবার বিপরীতে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) সনদের পরিবর্তে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়।

বর্তমানে যেসব সেবার বিপরীতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে রিটার্ন : ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ নিতে চাইলে; কোম্পানির পরিচালক পদ পেতে; আমদানি-রপ্তানির সনদ; ব্যবসা শুরুর ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নকালে; সমবায় সমিতির লাইসেন্স নিতে; বীমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হিসেবে নিবন্ধন পেতে; ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রিকালে; ক্রেডিট কার্ড নিতে; পেশাজীবী সংগঠনের (চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, সার্ভেয়ার) সদস্যপদ পেতে; কাজী সনদ গ্রহণ করতে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য পেতে; ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র ও বিএসটিআইর সনদ পেতে; বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগ অথবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ পেতে; নৌযানের সার্ভে সনদ নিতে; ইটভাটা চালু করতে; বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে; কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেতে; আগ্নেয়াস্ত্র সনদ পেতে; আমদানির এলসি খুলতে; ৫ লাখ টাকার বেশি ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ও ৫ লাখ টাকার বেশি অন্য সঞ্চয়পত্র কিনতে; ব্যাংক হিসাব খুলতে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে; যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসায়িক অংশীদার হলে; বীমা কোম্পানির এজেন্সি সনদ নবায়ন করতে; মোটরসাইকেল ও সিএনজি ছাড়া অন্য যানবাহনের মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে; বিদেশি অনুদান গ্রহণকারী এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সনদ গ্রহণ করতে; আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ করতে; বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে চাইলে, সরকারি-বেসরকারি দরপত্র জমা দিতে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা গ্রহণকালে, ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল বেতনভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন তুলতে রিটার্ন জমার সিøপ লাগবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.