গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বড় বড় জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে। গতকাল এই বন্দরে ৬৫ হাজার টনেরও বেশি কয়লা নিয়ে জাহাজ বার্থিং নিয়েছে। ক্রমে আরো বড় জাহাজ আসবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, খুব শীঘ্রই এক লাখ টনেরও বেশি কয়লা নিয়ে জাহাজ ভিড়বে এই বন্দরে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ–জি) ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা করেন। এরই প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে জাপানি বিশেষজ্ঞরা মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাঁচামাল খালাসের জন্য যে বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে তার সাথে কিছু সুবিধা যুক্ত করলে একটি বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণ সম্ভব বলে পরামর্শ দেন। জাপানি বিশেষজ্ঞদের ওই পরামর্শ লুপে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববধানে মাতারবাড়ীতে বন্দর উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। কয়লা খালাসের জন্য আড়াইশ’ মিটার প্রস্থ এবং ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। তার পাশে আরো একশ’ মিটার বাড়িয়ে এটিকে পরিণত করা হয় গভীর সমুদ্র বন্দরে। এখানে অনায়াসে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। ইতোপূর্বে এই বন্দরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিয়ে শতাধিক জাহাজ ভিড়েছে।
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্টের বাইরে গত ২৪ এপ্রিল কয়লার একটি বিশাল চালান নিয়ে প্রথম জাহাজ নোঙর করে মাতারবাড়ীতে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৬৩ হাজার টন কয়লা নিয়ে আসা ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের গভীরতা) পানামার পতাকাবাহী এমভি ‘অউসো মারো’ জাহাজটিকে পরদিন ২৫ এপ্রিল বিকেলে মাতারবাড়ী জেটিতে বার্থিং দেয়া হয়। দেশের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় জাহাজ। জাহাজটি সফলভাবে কয়লা খালাস করে গত ৭ মে সকালে মাতারবাড়ী ত্যাগ করেছে। ওই জাহাজের ধারাবাহিকতায় গতকাল ৬৫ হাজার ২৫০ টন কয়লা নিয়ে অপর একটি বড় জাহাজ আসে মাতারবাড়ীতে। এমভি এনডেয়াভোর নামের জাহাজটিকে গতকাল দুপুরে বার্থিং দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পাইলট মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইনের নেতৃত্বে পাইলটেজ টিম গভীর সমুদ্র থেকে ১৪.৩ কিলোমিটারের চ্যানেল ধরে জাহাজটি জেটিতে নিয়ে আসেন। ওই সময় বন্দরের টাগ কান্ডারি ২ এবং ৪ জাহাজটি বার্থিং এ সহায়তা করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, হংকংয়ের পতাকাবাহী এমভি এনডেয়াভোর জাহাজটি ২২৮ দশমিক ৯৯ মিটার লম্বা। এটির ড্রাফট ১২.৫ মিটার। আজ থেকে এই জাহাজ থেকে কয়লা খালাস শুরু হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব ঘুচাতে শুরু করেছে মাতারবাড়ী বন্দর। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে গত মাস দুয়েক আগ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানো যায়। এর আগে ১৯০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যেত।
পায়রা বন্দরেও সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়েছে। অবশ্য পায়রা বন্দরে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
মাতারবাড়ী বন্দরে সর্বোচ্চ ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো শুরু হলে এই বন্দর দেশের সমুদ্রবাণিজ্যে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটাবে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের যে অভাব বাংলাদেশের ছিল তা অচিরেই ঘুচতে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মাতারবাড়ীতে এক লাখ টন কয়লা নিয়ে অচিরেই জাহাজ ভিড়বে। একই সাথে আমাদের যে কর্মযজ্ঞ চলছে তা সম্পন্ন হলে এখানে ১৪ মিটার ড্রাফটের যে কোনও ল্যান্থের কন্টেনার ভ্যাসেলও নোঙর করবে। উল্লেখ্য, মাতারবাড়ীতে ৩০০ মিটার লম্বা মাল্টিপারপাস জেটি এবং ৪৬০ মিটার লম্বা কন্টেনার জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে।