ভারতের বিদ্যুৎ ও তেলের মূল্য রুপিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ডলার সংকটের কারণে প্রায় আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাতে টানাপড়েনের মধ্যে আছে সরকার। কয়লা, এলএনজি, জ্বালানি তেলসহ প্রয়োজনীয় আমদানির দ্রব্যের বিল পরিশোধে ডলার সংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ আমদানির বিল ডলারের পরিবর্তে রুপিতে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভারত ডলারের পরিবর্তে রুপি গ্রহণ করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, আমাদের যারা জ্বালানি তেল সরবরাহ করে, তারা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা পাবে। মূলত ডলার সংকটের কারণে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ডলারের ওপর চাপ কমাতে আমরা ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির দাম রুপিতে পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগের পাঠিয়েছি। সেখান থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগে খোঁজ নিলে জানা যায়, গত ৯ জুন জ্বালানি বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি ফাইল উপস্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে বিষয়টি পাঠানো হবে। সেখান থেকে ডলারের পরিবর্তে রুপিতে এলসি খোলার জন্য ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
জ্বালানি বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রয়েছে। ফলে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিল যদি রুপিতে পরিশোধ করা যায়, তবে ডলারের ওপর চাপ কমবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভারত নীতিগতভাবে সম্মত আছে। এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ অনুমোদনের পর বাকি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে জ্বালানি আমদানিতে সংকটে পরে সরকার। ডলার সংকটে গত বছর এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছিল অনেক দিন। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের সংকট প্রকট হয়েছে। ডলার সংকটে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণে বন্ধ হয়ে আছে। একই কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে পড়েছিল। কয়লা আমদানি করতে না পারলে আবারও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) পাওনাদারদের বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এদিকে ডলার সংকটে বিপিসি তেল সরবরাহকারীদের চাপ থাকা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে তেল সরবরাহের চেইন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, তেল সরবরাহকারীরা তাদের পাওনার জন্য চাপ তৈরি করেছে। তবে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে তাদের পাওনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেনের বিষয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেনের বিষয়ে ১১ মে বিপিসি থেকে জ্বালানি বিভাগে একটি চিঠি দেওয়া হয়। পরে জ্বালানি বিভাগে গত ৯ জুন ফাইল উপস্থাপন করা হয়।
বিপিসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার-সংকটের কারণে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুসারে ডলার সরবরাহ না করায় আমদানি মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধে প্রায় এক মাস সময় লাগছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের আমদানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ভারতীয় মুদ্রায় ঋণপত্র খোলা ও মূল্য পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মত হলে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপর এটি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এসব কাজ শেষ হলে ভারতের তেল সরবরাহ কোম্পানিকে রুপিতে বিল পরিশোধের বিষয়টি জানানো হবে।
বিপিসির প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মে থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের নুমালিগড় থেকে ৫৮ হাজার টন ডিজেল আমদানি করা হবে। এর জন্য প্রায় তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন রুপি পরিশোধ করতে হবে। একই সময়ে আইওসিএল থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টন ডিজেল ও জেট ফুয়েল কেনা হবে। এর মূল্য বাবদ প্রায় ১২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ভারতীয় রুপি পরিশোধ করতে হবে।
অন্য দিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শুধু ভারত থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ রুপিতে নয়, আমদানিকৃত বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধও রুপিতে করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিষয়টি জানতে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, যদি জ্বালানি বিভাগের পক্ষে জ্বালানি তেল আমদানির মূল্য রুপিতে পরিশোধ করতে পারে জ্বালানি বিভাগ, তাহলে বিদ্যুতের দামও রুপিতে পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন বিদ্যুৎ বিভাগও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে ডিজেল নেয় বিপিসি। আগে ওয়াগনের মাধ্যমে ডিজেল নিলেও এখন দুই দেশের মধ্যে তৈরি করা মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। গত ১৮ মার্চ এ পাইপলাইন দিয়ে দেশে জ্বালানি তেল আসা শুরু হয়েছে। বিশ^ব্যাপী নানা সংকটে কারণে ভারত থেকে বেশি পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করতে চায় বিপিসি।