‘দেশে আর কোনো অনির্বাচিত সরকার আসবে না’
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, দেশে আর কোনো অনির্বাচিত সরকার আসতে পারবে না। ক্ষমতায় আসতে হলে সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বললেও কোথাও স্মার্টনেস দেখি না। আমরা ঘুষ-দুর্নীতি ও অর্থপাচারে স্মার্ট হয়েছি।
রবিবার (১৮ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল স্পিকার আ স ম ফিরোজ। এই আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধীদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কথা বলেন। কিন্তু তাদের সময়ে এর কোনোটাই ছিল না।
জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করেছিল। স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করেছে। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার আয়োজন হয়।
বিএনপি এখনো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম বলেন, বিএনপি এখন অনির্বাচিত সরকার আনতে চাইছে, তাদের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে আর কোনো অনির্বাচিত সরকার আসতে পারবে না। কিন্তু বিএনপি সেই ধরনের সরকার আনার চেষ্টা করছে। এ দেশের নির্বাচন আমাদের রীতি অনুযায়ী হবে, জনগণ যে রায় দেবে সেই ভাবেই নির্বাচন হবে। কারো প্রেসক্রিপশনে আমাদের নির্বাচন হবে না, আমাদের একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন রয়েছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, আজ আমাদের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু দেশের রাষ্ট্রদূতরা নানা ধরনের মন্তব্য করছেন।
বিএনপির সঙ্গে দেখা করে তাদের মিথ্যা অভিযোগ আমলে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে চলেছেন। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। তাই আমরাও বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার আশা করি। কেননা আমাদের উন্নয়ন সহযোগীতার প্রয়োজন আছে। তিনি আরো বলেন, একটি দলের নেতারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দেখা করে লাফালাফি করছে। কিন্তু আমাদের নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে।
সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম বলেন, ২০০৭ সালে তারেক মুচলেকা দিয়ে আর রাজনীতি না করার শর্তে বিদেশে পালিয়ে যায়। ফালু এখনো পালিয়ে আছে। বিএনপির অনেক নেতা পালিয়ে গিয়ে বিদেশে মারাও গেছে। তারেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি, খালেদাও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারা নির্বাচন করতে পারবে না। সুতরাং অন্য কেউ এখানে এসে নেতা হোক তা তারেক জিয়া চাইবে না। তারেক জিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে করাপশন ও পলিটিক্যাল ক্রাইম থাকার কারণে সে আর আমেরিকায় যেতে পারবে না। তারা এখানে কোনো সন্ত্রাস জঙ্গি বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে পারবে না। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া, মঈনুদ্দিন-ফখরউদ্দীন নিজেদের আখের গোছাতে এসেছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের সেবা করতে এসেছেন। জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সরকার উন্নয়নের কথা বললেও দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। সরকার বলে খেলাপি ঋণ নাকি মাত্র এক কোটি এক লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংক মনে করে, বাস্তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ গুণ বেশি। আর পাচার করা অর্থের কি হিসেব আছে? সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে আমেরিকায় একাধিক বাড়ি করেছে। এটা কেন বাংলাদেশ ব্যাংক ঠেকালো না। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া একটি টাকাও বিদেশে যেতে পারে না। কই অর্থ পাচারে জড়িতদের কেউ তো ধরছেন না। অথচ আমাদের অর্থনীতিতে নানামুখী চাপ রয়েছে।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, করোনার চাপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ, আইএমএফের শর্তের চাপ, ব্যাংক খাতের লুটপাটের চাপ। বহুমুখী এত চাপের মোকাবেলায় বাজেটের অগ্রযাত্রা মোটেও নিরাপদ হবে না। বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এনবিআরকে অটোমেশন করলে আরো দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় হতো। ব্যাংক ঋণের দরকার হতো না। কিন্তু এই দেড় লাখ কোটি টাকা প্রতিবছর এনবিআর ঘুষ খাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চুরিতে, চাঁদাবাজিতে, টাকা পাচারে স্মার্ট হয়েছি। আমরা এখন আর টাকায় ঘুষ লেনদেন করি না। ঘুষ ডলারে নিয়ে বিদেশে নিয়ে স্মার্ট হয়েছি। অথচ ঢাকা শহরে কোথাও সিগনাল জ্বলে না। ট্রাফিক সদস্যদের হাত দিয়ে গাড়ি কন্ট্রোল করতে হয়।
জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ বলেন, রাজনীতি আজ চাটুকারিতায় ভরে গেছে। যার যত বেশি মিথ্যা কথা বলতে পারবে, যত বেশি তৈল মর্দন করতে পারবে, যত বেশি লুটপাট করতে পারবে, টাকা পাচার করতে পারবে, তারা তত বেশি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট হয়ে যাবে। তারা কিন্তু একদিন সাপের ছোবল মারবে। যারা মুজিব কোর্ট নিয়ে বুক ফুলিয়ে সবচেয়ে বেশি মধু খাচ্ছে, তারাই আওয়ামী লীগ থেকে তত বেশি সুবিধা পাচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। দুর্দিনে তাদের টিকিটিও পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, যারা (৭৫) সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশ ডিঙিয়ে মোশতাকের মন্ত্রিসভায় এসেছিলেন তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ট ছিল। খুব আশ্চর্যের ঘটনা যারা সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশ ডেঙিয়ে মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছিলেন তাদের অনেকেই আবার বুক ফুলিয়ে পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং মন্ত্রীও হন। এ সকল বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণফোরামের এমপি সুলতান মোহম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, শেখ হাসিনার নাম দেশ ছাড়িয়ে বাইরেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। বিএনপি জোর করে ক্ষমতায় এসেছে। তারা আসলে নো পার্টি। তাদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বলতে হয় তাই বলেই যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিরোধী দল বলেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তালিকা থাকলে প্রকাশ করুন। আমরা দেখবো কারা পাচার করেছে। বিএনপি এখন রাজনীতি করতে পারছেন না, বিধায় তাদের গাত্র দাহ হচ্ছে। তারা জানে জনগণ তাদের ভোট দেবে না, তাই তারা অগণতান্ত্রিক পথে হাঁটার চেষ্টা করছে।
বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিমানের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বিমান লাভজনক অবস্থায় পরিণত হয়েছে। আগামী অক্টোবরে তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন হবে বলে জানান তিনি। এর ফলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাত্রীদের প্রচুর সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি। এই আলোচনায় আরো অংশ নেন তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সরকার দলীয় সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, এস এম শাহজাদা, আফরোজা হক, আবিদা আনজুম মিতা, শাহদাব আকবর প্রমুখ।