সেপ্টেম্বরে খুলছে উন্নয়ন দুয়ার
বিডি২৪ভিউজ ডেসাক : কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-কক্সবাজার রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাংশ ♦ অক্টোবরে থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেল আগারগাঁও-মতিঝিল ♦ পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ ও যমুনায় রেলসেতুর কাজও শেষ পর্যায়ে ♦ খুলছে বিআরটির অন্য অংশ
পদ্মা সেতু, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর পর এবার চলতি বছরের মধ্যে অন্তত আরও চারটি মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম টানেল। এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেলসংযোগও চালু হতে যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। এর মাধ্যমে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করে সরকার। এদিকে ঢকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশও (বিমানবন্দর-ফার্মগেট) খুলবে সেপ্টেম্বরে।
এ ছাড়া আসছে অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের একাংশ। এ টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত লন্ডনের হিথ্রো, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি, সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি, আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরের আদলে। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংকেত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প। যার মাধ্যমে আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটবে বাঙালি জাতির। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংদের দ্বাদশ নির্বাচন হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে। তার আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই দ্বার খুলছে আরও অন্তত চারটি মেগা প্রকল্পের।
২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের যাতায়াতব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ সমগ্র অবকাঠামোর উন্নয়নে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আটটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। পরে অবশ্য মেগা প্রকল্পের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেছে। যার ফল দৃশ্যমান। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজও চলমান। এরপর মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিটসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ, মগবাজার মৌচাক, কুড়িল, ইসিবি চত্বরসহ ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে রাজধানী ঢাকার যানজট অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। সহজও হয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা আরও গতিশীল ও স্বচ্ছন্দ করতে সড়ক ও মহাসড়ক খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে গত এক দশকে।
সূত্র জানান, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর আগারগাঁও-মতিঝিল চালু হচ্ছে অক্টোবরে। এ অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া এ লাইন-৬ বর্ধিত অংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হবে আগামী বছর। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবং যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন রেলসেতুর কাজও শেষ পর্যায়ে। সেতু বিভাগ সূত্র জানান, বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলমান প্রকল্প বিআরটির এক প্রান্ত খুলে দেওয়া হবে যান চলাচলের জন্য। চলতি বছরের মধ্যে খুলছে বিআরটির অন্য অংশও। অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাংশও খুলছে সেপ্টেম্বরে; যার মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এদিকে ৩১ মে আইএমএডি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা আট প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোর গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হলো পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকারের নানা সমালোচনা থাকলেও একই সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় উন্নয়ন তো কিছু হয়েছেই। তা তো অস্বীকার করা যায় না। এসব প্রকল্পের নির্বাচনী সুবিধাও নিতে চাইবে আওয়ামী লীগ। ফলে ভোটের আগে তাড়াহুড়ো করে হলেও অনেক প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে একটানে ফার্মগেট। নেই সিগন্যাল, নেই ট্রাফিক জ্যাম। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এ সুবিধা পেতে আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না রাজধানীবাসীকে। আসছে সেপ্টেম্বরেই এ অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ ও বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত শেষ অংশে ভৌত কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের সর্বমোট কাজ শেষ হয়েছে ৬৩ শতাংশ। পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এই এক্সপ্রেসওয়ে।
মেট্রোরেল লাইন-৬ : দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল নিয়মিত চলাচল করছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক চলাচল। আসছে অক্টোবরেই দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে ঢাকাবাসীর লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট।
কর্ণফুলী টানেল : চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে আসছে অক্টোবরে। যার মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা অন্যতম। এ প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।
পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ : স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি এ সেতুতে রেলসংযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজ। তবে আর অপেক্ষা নয়, এ বছরই তার অবসান হতে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রচারণায় প্রভাব ফেলতে ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভোট নিজেদের দিকে টানতে তার আগেই আংশিক উদ্বোধন হবে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প। যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর এ বছর চালু হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত। ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেলসংযোগ নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগামী করতে ঢাকা-যশোর ১৬৯ কিলোমিটারের এ রেললাইন নির্মিত হচ্ছে। এ পুরো প্রকল্পে অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ রুটটির কাজ চার অংশে ভাগ হয়ে চলছে। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হবে এ প্রকল্পের কাজ।
ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন প্রকল্প : সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে চান্দেরপাড়ার ২৯ একর জায়গায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনুকের আদলে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে। ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয় তলা ভবনের রেলস্টেশনে থাকা-খাওয়াসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। বর্তমানে ভবনের চারদিকে গ্লাস ফিটিংস ও চীন থেকে আনা স্টিলের ক্যানোফি স্থাপনের কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই রেলস্টেশনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেলটি এখন বাংলাদেশের। বহুল প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ টানেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। এখন চলছে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কর্ণফুলী নদীর দুই পারের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দেবে এ টানেল। দেশের প্রবৃদ্ধিতে রাখবে অনন্য অবদান। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল : অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের একাংশ। এ টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত লন্ডনের হিথ্রো, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি, সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি, আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরের আদলে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৬০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনও এখন দৃশ্যমান। চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে বাড়বে উড়োজাহাজ চলাচল ও যাত্রীসেবার মান। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংকেত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। ৫ হাজার থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও চলমান। এ প্রকল্পের একাংশ চালু হতে পারে আসছে সেপ্টেম্বরে।