পাবনার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রম, সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগ! আশ্রম অঙ্গনে ভীতিকর ও অশান্ত করার পায়তারা

সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগ!

0

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার হিমাইতপুরস্থ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের বর্তমান সভাপতি সাবেক সম্পাদক পদে দায়িত্বপালনকালে ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার অনৈতিক পন্থায় আশ্রমের জমি বিক্রি, এক নারীর অনুদানের টাকা এবং মার্কেট নির্মাণের নামে নানা অনিয়ম করে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ১ টাকা ক্ষতি এবং আত্মসাৎ করেছেন বলে লিখিত অভিযোগে জানা গেছে।

অন্যদিকে আশ্রম অঙ্গনে ভীতিকর পরিবেশ তৈরী, গ্রুপিংসহ প্রতিষ্ঠান বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে সভাপতি-সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি মিটিং এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সভাপতি পন্থী ঠাকুর অনুসারী ও বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে নাশকতার চেষ্টাকালে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত করা হয়।

এদিকে দুদক কর্তৃক তদন্ত চলমান থাকাবস্থায় তিনি তদন্ত টিমের সামনে অসুস্থতার কথা বলে হাজিরা না দিলেও আশ্রমে বসে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সৎসঙ্গের টাকা আশ্রমে ক্যাশে জমা না দিয়ে প্রায় ৭/৮ টা ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা গচ্চিত রেখে খরচ করার প্রমাণ পেয়েছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫ সালথেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রভাব খাটিয়ে ও অদৃশ্য শক্তির জোরে বিভিন্ন সময়ে লিখিত ভাবে, মৌখিক ভাবে, উকিল নোটিশের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হলেও সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার অদ্যবধি টাকাগুলো আশ্রমের ফিলানথ্রপিতে জমা করেননি। অভিযোগ উঠেছে এই অনিয়ম ও আত্মসাতের সাথে আশ্রমের কতিপয় অসৎ লোকজন সম্পৃক্ত রয়েছে।

আশ্রমের রেজুলেশন, লিগ্যাল নোটিশ ও দুদক বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, পাবনা সদরের ঘোষপুর মৌজায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ হিমাইতপুর আশ্রমের নামীয় ১২/১৩ বিঘা জমি ২০১৫ সালে ড. রীবন্দ্রনাথ সরকার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে নির্বাহী পরিষদের অনুমতি ও অনুমোদন ছাড়াই বিক্রি করেন। জমি বিক্রির ৬ লক্ষ টাকা তিনি সংঘের তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।

২০১৮ সালে সবিতা রানী দাস নামের এক ঋত্বিক তাদের পরিবারের কল্যাণে আশ্রমে ১ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। ঋত্বিক কল্যাণ তহবিল নামে একটি ব্যাংক হিসাব খুলে ওই টাকা সেখানে জমা করানোর জন্য নির্বাহী কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অথচ ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার এই টাকা কোন ব্যাংক হিসাব না খুলে নিজের নামে পোস্ট অফিসে জমা করেছেন। এই অনুদানের টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৪ সালে এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, আশ্রমের জায়গায় বুদেরহাট নামক স্থানে দোকান ঘর, মার্কেট ও দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সকল স্থাপনা নির্মাণ, আর্থিক লেনদেন, চুক্তিনামা, পজেশন বিক্রিসহ যাবতীয় কর্মকান্ড একক কর্তৃত্ব ও সিদ্ধান্তে করেছেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার। ২০১২ সালে ৪২ টি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়।

প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ড. রবীন্দ্রনাথ সরকারের সময়ে মার্কেট ও ভবন নির্মাণে অপব্যয়, আত্মসাৎ ও অপচয়ের কারণে আশ্রমের স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। আর অস্থায়ী ক্ষতি হয়েছে ২২ লক্ষ ৮০ হাজার ১ টাকা। তদন্ত কমিটি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকারকে সমুদয় টাকা পরিশোধের জন্য সুপারিশ করেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আশ্রমের সাবেক সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আশ্রমের একটি সুবিধাভোগী চক্র আমার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন। এ অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। একটি উদ্ভূত পরিস্থিতি হয়েছিল। সেটা স্থানীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত থেকে সমাধান করে দিয়েছিলেন। আর সবিতা রানী দাসের টাকা আমি পোস্ট অফিসে গচ্চিত রেখেছি। কল্যাণ তহবিল হয়নি। হলেই ওই টাকা সেখানে জমা করা হবে।

নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ এবং আশ্রমের স্থায়ী ক্ষতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আশ্রমের সেবক হিসেবে কাজ করছি। আমার জানা মতে কোন অনিয়ম করিনি। আর অর্থ আত্মসাৎ, স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্ষতি পূরণে আমাকে কোন নোটিশ দেয়া হয়নি বা আমার গোচরে আসেনি।

ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বর্তমানে যে কমিটি করা হয়েছে তাতে আমাকে না জানিয়ে সভাপতি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই আমাকে না জানিয়ে আর্থিক নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। ইচ্ছেমাফিক অর্থ অপচর রোধে সম্প্রতি আশ্রমের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিয়েছি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভক্ত ও কর্মি জানান, সভাপতির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নির্বাহী পরিষদে উত্থাপন, রেজুলেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ বৈঠকে সভাপতি নিজেই উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে তার উপর পরিষদের পক্ষ থেকে অনাস্থা আনা হয়। সেই সাথে পরিষদের বিধি মোতাবেক তাকে বাদ রেখে জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি দিয়ে পরিষদের বৈঠক করার জন্য অনুমোদন করা হয়।

একাধিক ঠাকুর ভক্ত জানান, সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহার আহবানে চলতি মাসেই প্রথম সপ্তাহে নির্বাহী কমিটির সভা আহবান করা হয়। এই সভায় সভাপতির নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি কর্মকান্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ছিল। কাউকে না জানিয়ে আকষ্মিকভাবে সভাপতি ফেসবুকের মাধ্যমে একই দিন একই সময়ে আশ্রমে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ব্যানারে সভা আহবান করেন। সেই সাথে তিনি যশোর, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঠাকুর ভক্ত তার অনুসারীদের আশ্রমে নিয়ে আসেন। সেই সাথে এই মিটিং ভন্ডুল করতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে আশ্রম ক্যাম্পাসে আনেন।

বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলে জেলা প্রশাসক মৌখিক ভাবে উভয়গ্রুপের সভা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ দেন।

আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা বলেন, সভাপতির নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও অসঙ্গতির ব্যাপারে নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আশ্রমের আইন উপদেষ্ঠাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখভাল করছেন। ড. রবীন্দ্রনাথ সরকারের এই অনিয়ম, আত্মসাৎ এর সাথে আশ্রমের কতিপয় ঋত্বিক ও প্রভাবশালীরা জড়িত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কারা জড়িত এটা জানিনা। তবে তদন্ত কমিটিতে আমিও ছিলাম। এখন আইনগত ভাবেই আশ্রমের টাকা উদ্ধারে কাজ চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে আশ্রমের আইন উপদেষ্টা ও আশ্রমের নির্বাহী সদস্য শ্রী পুলক কুমার চক্রবর্তীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় তার মতামত পাওয়া যায়নি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.