নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নির্বাচিত নেতাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা, গৃহদাহ নিরসন ও নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য ইতোমধ্যে দলের তৃণমূলের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতা রাজধানীতে পৌঁছেছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই বৈঠককে দলীয়ভাবে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা প্রায় পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠেয় দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা নেবেন। এরপর থেকেই নির্বাচনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলীয় প্রস্তুতিকে আরও জোরদার করে তোলা হবে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছাড়াও জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদে দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আজকের বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগ দেবেন। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতার সভায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশেষ বর্ধিত সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশের তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দলের সব অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের প্রচেষ্টাও চলছে। এর অংশ হিসেবেই আজকের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। যেখানে তৃণমূল কমিটিগুলোর পদধারী সব নেতার পাশাপাশি দলীয়ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কার অথবা সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং পরে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে– এমন পদধারী নেতাদেরও সভায় ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া নৌকার প্রার্থী হয়ে জিততে না পারা নেতারাও সভায় যোগদানের সুযোগ পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে সর্বস্তরের নেতাদের মাঠের প্রচার-প্রচারণায় যুক্ত করতে এই মুহূর্তে সবাইকে কাজে লাগাতে চাইছে ক্ষমতাসীন দলটি।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃত্বে এটি প্রথম বর্ধিত সভা। এর আগে দলের সর্বশেষ বিশেষ বর্ধিত সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৩ জুন। সেদিন দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকেছিলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে বর্ধিত সভা হতে পারেনি। কেননা ওই কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পরে করোনা সংকটের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতাও চলেছে। ফলে আজকের বিশেষ বর্ধিত সভার মাধ্যমে প্রায় পাঁচ বছর পর দলীয় ফোরামের বড় কোনো সভায় একসঙ্গে তৃণমূল নেতাদের জড়ো হওয়ার সুযোগ মিলছে। যদিও সম্প্রতি দলের কয়েকটি জেলা-উপজেলা ও মহানগর নেতাদের গণভবনে ডেকে আলাদাভাবে মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজকের বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের কথাও শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের আটটি বিভাগ থেকে আটজন নেতাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তৃণমূল নেতারা দীর্ঘদিন পর দলীয় প্রধানের সামনে কথা বলার সুযোগ পেলে খোলামেলাভাবে সর্বশেষ সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষোভ-অন্তোষের কথা বলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। তাদের বক্তব্যে বিভিন্ন স্থানে দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কথাও উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনার পর সবশেষে তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা।
এদিকে আজকের বিশেষ বর্ধিত সভার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের কার্ড বিতরণের কাজও শেষ। গণভবন চত্বরের মাঠে বর্ধিত সভার মঞ্চ ছাড়াও আমন্ত্রিতদের জন্য বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের জন্য বিভাগওয়ারি প্যান্ডেলে বসার ব্যবস্থা হয়েছে। এজন্য আটটি বিভাগের জন্য আলাদা আটটি প্যান্ডেল থাকবে। তৃণমূল নেতাদের মধ্যাহ্নভোজের জন্যও বিভাগওয়ারি বুথ করা হয়েছে।
বিশেষ বর্ধিত সভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী গণভবনে অনুষ্ঠেয় বিশেষ বর্ধিত সভায় আমন্ত্রিত নেতারা বিজয় সরণি দিয়ে জাতীয় সংসদের লেক রোড হয়ে গণভবনের এক নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত গাড়ি ডিএমপি পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র-সংলগ্ন মাঠে পার্ক করতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই নির্দেশনা মেনে চলার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন।