গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে ময়মনসিংহ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী ৯ আগস্ট বুধবার থেকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে ময়মনসিংহ জেলা। এ দিনে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে জেলার ৭৯৫টি পরিবার পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের দুই শতাংশ জমির মালিকানার দলিলসহ দুই রুমবিশিষ্ট সেমি পাকা নতুন ঘর। বুধবার চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ৭৯৫টি পরিবারসহ জেলার ১৩ উপজেলায় এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন মোট চার হাজার ১২৪ পরিবার। ‘মুজিব বর্ষে দেশে কেউ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর ময়মনসিংহের হতদরিদ্র ভূমিহীন ও গৃহহীন চার হাজারের বেশি পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা, উচ্ছ্বসিত।
আবাসন পল্লীর প্রতিটি ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের ঢেউ লেগেছে প্রতিটি আবাসন পল্লীতে। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগামী বুধবার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের কাছে নতুন ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। এর পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া নতুন ঘরের চাবিসহ জমির মালিকানার দলিল তুলে দেওয়া হবে ভূূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের হাতে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ জেলার চার হাজারের বেশি পরিবারের মুখে খুশির হাসি ফোটাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান শনিবার জনকণ্ঠকে জানান, চতুর্থ পর্যায়ে দেশে ২২ হাজারের বেশি পরিবার পাচ্ছেন দুই শতাংশ জমির মালিকানার দলিলসহ টিনশেডের দৃষ্টিনন্দন সেমিপাকা নতুন ঘর। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে মোট পাঁচ লক্ষাধিক পরিবারকে জমিসহ নতুন ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে মুজিববর্ষেই প্রায় দুই লাখ পরিবারকে জমিসহ নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ সদরের প্রথমে গোহাইল কান্দি ও পরে বাড়েরাপাড় গ্রামের নিকটাত্মীয় মৃত তাহের আলীর বাড়িতে মাসিক দুই হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন রং মিস্ত্রি হযরত আলী ও তার শারীরিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। দুই সন্তানের এই জননী জীবনের শেষ বেলায় এসে ৬৩ বছরের মাথায় এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। এ নিয়ে এই দম্পতির আনন্দের সীমা নেই। নতুন ঘর পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হযরত আলী ও আনোয়ার বেগম দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন। আগামী নির্বাচনেও যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল ক্ষমতায় এসে দেশের হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণ করতে পারেন সেই দোয়াও করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আগামী বুধবার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেলতলী আবাসন পল্লীতে চতুর্থ পর্যায়ে জমিসহ নতুন ঘর পাচ্ছেন ৩১ পরিবার। পুরো উপজেলায় চতুর্থ পর্যায়ে মোট জমিসহ নতুন ঘর পাচ্ছেন ২৯০ পরিবার। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সদর উপজেলায় মোট ৮০০ পরিবার পেয়েছেন জমিসহ নতুন ঘর।
জেলায় চতুর্থ পর্যায়ে জমিসহ নতুন ঘর পাচ্ছেন ৭৯৫ পরিবার। এ নিয়ে জেলার ১৩ উপজেলায় চার হাজার ১২৪ পরিবার জমিসহ নতুন ঘর পেয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ রকম মানবিক একটি প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে গর্ববোধ করার কথা জানান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শফিকুল ইসলাম। চতুর্থ পর্যায়ে গফরগাঁও উপজেলার ব্রহ্মপুত্র পারের চরআলগী গ্রামে জমিসহ নতুন ঘর পাচ্ছেন ৮৮ পরিবার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, এটি তার চাকরি জীবনের সেরা প্রাপ্তি। এত পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁইসহ তাদের মুখে হাসি ফোটানোর মতো কাজে যুক্ত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন এই কর্মকর্তা। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, চাকরি জীবনে এর চেয়ে আর বড় কাজ কি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলার ১৩টি উপজেলার চার হাজার ১২৪টি পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এই জেলা প্রশাসক। এরপরও যদি জেলায় কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন খুঁজে পাওয়া যায় পরবর্তীতে তাদেরকেও পুনর্বাসন করার কথা জানান তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর স্থবির হয়ে পড়ে এই কার্যক্রম। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে দেশজুড়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেন। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ স্লোগানে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারসহ জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের জন্য ক ও খ শ্রেণির তালিকা তৈরি করে আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হয়।