প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হবে ৩৬ টাকায়
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হবে ৩৬ টাকায়। এর বেশি দাম নেওয়া হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ বুধবার থেকে সারাদেশে আলু বাজার মনিটরিং করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ ছাড়া পাকা রশিদ ছাড়া আলু বেচাকেনা করা যাবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে হিমাগার মালিক, পাইকার, মজুতকারী ও আলুর খুচরা বিক্রেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, এ বছর মৌসুমে কৃষক পর্যায় থেকে প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতি কেজি আলুতে হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ ৫ টাকা। এ ছাড়া পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করা হলে প্রতি কেজি আলু পাইকারি পর্যায়ে ২৮ টাকা বিক্রি হলেও ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে পারেন।
তাই সেই আলু খুচরা পর্যায়ে কোনোভাবে ৩৫-৩৬ টাকার বেশি হতে পারে না। এসব বিবেচনায় নিয়েই প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৬ টাকা করা হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে ৩৬ টাকায় বিক্রি করতে হবে প্রতি কেজি আলু। দাম বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। উল্লেখ্য, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু এখন মানভেদে ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুতে বেশি নেওয়া হচ্ছে ৯ থেকে ১৯ টাকা। অর্থাৎ ভোক্তাদের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে।
আলুর দাম বাড়ায় কষ্ট বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবারও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। হিমাগার মালিকরা নিজেদের দোষ আড়াল করতে একে অপরকে দায়ী করে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। দেশে হিমাগারে যত আলু মজুত আছে তা মূলত সংরক্ষণ করেছেন মালিক পক্ষই। আলুর বাজার পুরোপুরি চলে গেছে হিমাগার মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে সহজে পরষ্পর যোগসাজশে আলুর বাজার অস্থির করে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বুধবারের বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খুচরা বাজারে আলুর দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ঢাকাসহ স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানোর জন্য সব পক্ষের কাছে আগামীকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা যাবে। দাম বেশি নেওয়া হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে, আমরা কাজ করছি, আশা করা যায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলুর বাড়তি দাম কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সরবরাহ সংকটের অজুহাতকে দায়ী করেন।
আবার কেউ কেউ হিমাগার থেকে আলু সরবরাহ কমার কথাও বলেন। হিমাগার মালিক পক্ষ বলছে, হিমাগারে যে পরিমাণ খাবারের আলু সংরক্ষণ করা হয় তার ৫৫ শতাংশের মালিক ব্যবসায়ী ও কৃষক। ৪ শতাংশ আলু শিল্পে ব্যবহারের জন্য। মাত্র এক শতাংশ আলু হিমাগার মালিকদের। বাকি ৪০ শতাংশ বীজ আলু বলে দাবি করে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজা চৌধুরী বাবু।
তিনি বলেন, হিমাগারে শুধু ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করেন। দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ সময় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোনো হিমাগারে অস্বাভাবিক পরিমাণের আলু মজুত থাকলে সে তথ্য আমাদের দিন। এটা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আমরাও বিষয়টি দেখব। বৈঠকে পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বাড়ায় আলু ভোগের পরিমাণ বেড়েছে। যার প্রভাবে আলুর সরবরাহ কমেছে এবং দাম বেড়েছে। এ ছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীরাও স্বাভাবিকের তুলনায় আলুর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে অভিযোগ করেন তারা।