উড়াল-পাতাল মিলেই চলবে মেট্রোরেল
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের প্রথম পূর্ব-পশ্চিম এমআরটি করিডোর হচ্ছে। হেমায়েতপুর-ভাটারা ২০ কিলোমিটারে প্রাথমিক কাজ শেষ * শিগগিরই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী * অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক আগামীকাল
দেশের প্রথম পূর্ব-পশ্চিম এমআরটি করিডোর হচ্ছে। এটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ঢাকার ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। এর আওতায় হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। এর মধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার উড়াল (এলিভেটেড) এবং সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল (মাটির নিচে) দিয়ে ট্রেন চলবে।
এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুট শীর্ষক এ করিডোর তৈরির প্রাথমিক কার্যক্রম প্রায় শেষ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর এটির নির্মাণকাজ উদ্বোধনের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের কারণে সম্ভব হয়নি। শিগগিরই নতুন তারিখ দিয়ে উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন পিইসি’র (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) সভাপতি ও ডিএমটিসিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এ.এন. ছিদ্দিক। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেট্রোরেলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার যুগান্তরকে বলেন, লাইন-৫ এর প্রাথমিক কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। এর মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। দেওয়া হয় দাওয়াত কার্ড। কিন্তু ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসায় অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে নতুন তারিখ চাওয়া হয়েছে। আজ (রোববার) পর্যন্ত উদ্বোধনের নতুন সময়সূচি জানানো হয়নি। আশা করছি শিগগিরই কাজের উদ্বোধন হবে।
সূত্র জানায়, এমআরটি লাইন-৫ এর রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এটি সাভারের হেমায়েতপুর-বালিয়াপুর-বিলামালিয়া-আমিনবাজার-গাবতলী-দারুসসালাম-মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২, নতুনবাজার-ভাটারা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত এলিভেটেড রেললাইন। এ ছাড়া আমিন বাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত পাতাল হবে। এরপর নতুন বাজার থেকে ভাটার পর্যন্ত আবারও উড়াল বা এলিভেটেড হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১২ হাজার ১২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ব্যয় করা হবে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই জাইকার সঙ্গে ইআরডির ৩টি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুরো প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এছাড়া প্যাকেজভিত্তিক অগ্রগতির চিত্র হচ্ছে-প্রকল্পটির ভৌত কার্যক্রম ১০টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্যাকেজ-১ (ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন) এর আওতায় ৯৯ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, অগ্রিম অর্থ পরিশোধ এবং অধিগ্রহণ করা জমির সীমানা বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-২ (৩৪টি অবকাঠামো নির্মাণ) এর আওতায় যেসব অবকাঠামো নির্মাণ হবে সেগুলোর প্রাক যোগ্যতার আবেদন আহ্বান ও গ্রহণ করা হয়েছে।
মূল্যায়ন চলছে। বিস্তারিত নকশা ও দরপত্র দলিল তৈরির অগ্রগতি হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
প্যাকেজ-৩ এর আওতায় হেমায়েতপুর থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত ট্রানজিশন এবং নতুন বাজারের পর ট্রানজিশন থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৫টি উড়াল মেট্রোরেল স্টেশন তৈরি করা হবে। এসব নির্মাণকাজের প্রাকযোগ্যতার মূল্যায়ন শেষে জাইকার সম্মতি পাওয়া গেছে। দ্রুত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এই প্যাকেজের নকশা ও দরপত্র দলিল তৈরির কাজ ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
আরও জানা যায়, প্যাকেজ-৪ এর আওতায় আমিন বাজার ট্রানজিট থেকে মিরপুর-১ মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত পাতাল লাইন ও ৩টি মেট্রোরেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এটির বিস্তারিত নকশা ও দরপত্র দলিল তৈরির কাজের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্যাকেজ-৫ এর আওতায় মিরপুর-১ স্টেশনের পর থেকে কচুক্ষেত মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত পাতাল মেইন লাইন ও ৩টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর বিস্তারিত নকশা ও দরপত্র দলিল তৈরির কাজ ৮৫ দশমিক ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-৬ এর আওতায় কচুক্ষেতে স্টেশনের পর থেকে ভাটারা ট্রানজিট পর্যন্ত পাতাল মেইন লাইন ও ৩টি স্টেশন তৈরি করা হবে। এর বিস্তারিত নকশা ও দরপত্র দলিল তৈরির কাজ হয়েছে ৯৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।
প্যাকেজ-৭ এর আওতায় লাইন-৫ নর্দান রুটের (ইএন্ডএম সিস্টেম, সিগন্যাল সিস্টেম, টেলিকমিউনিকেশন, প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরস ও এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এর অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্যাকেজ-৮ এর আওতায় লাইন-৫ নর্দান রুটের জন্য রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। এর অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। প্যাকেজ-৯ এর আওতায় ডিপো ও মেইন লাইনের ট্র্যাক নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এছাড়া প্যাকেজ-১০ এর আওতায় অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এই কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এ.এন ছিদ্দিকের আগে যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহণ হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল তৈরি করা হবে। এগুলোর সমন্বয়ে ডিএমটিসিএলের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ১৪০ দশমিক ৭০ কিলোমিটারের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী থাকবে মেট্রোরেলের মধ্যেই। তিনি জানান, ৬টি মেট্রোরেলের মধ্যে প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হচ্ছে এমআরটি লাইন-৬। এটির মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুট ২০২৬-২৮ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হবে। তৃতীয় ধাপের এরআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং লাইন-৪ নির্মাণ করা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। তিনি আরও বলেন, আমরা একক কোনো উন্নয়নসহযোগী সংস্থার ওপর নির্ভর না করে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছি।