দেশ বাঁচাতে আবার নৌকায় ভোট দিন
পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণের পথে রেল চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ট্রেনে চড়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীকে দেশবাসীর ভোট চেয়েছেন। এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাওয়া রেলস্টেশনে এক অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বোন শেখ রেহানাসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে ভাঙ্গার উদ্দেশে ট্রেনে চড়েন দুপুর ১টার দিকে। ১৪ কোচের ট্রেনটি যাত্রা করে ৫৪ মিনিটে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছে।
বিকেলে ভাঙ্গায় কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র।
অনেক চক্রান্ত। কিন্তু আমার ভরসা একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়, সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।
আজ সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম।’ দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই লুটেরা বিএনপি, যে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, যে পলাতক আসামি, মুচলেকা দিয়ে দেশে ছেড়ে ভেগেছে, অর্থ আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র চোরাকারবারি—এই হলো বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি দিয়েছি। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে।’
ফরিদপুরবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এসেছি একটি উপহার নিয়ে। সেটি হচ্ছে রেল। আমি রেলে করে ভাঙ্গায় এসেছি। এটা কেউ কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। আমি আপনাদের পদ্মা সেতুর সঙ্গে সঙ্গে রেললাইনও উপহার দিয়ে গেলাম।’
পদ্মা সেতুর অর্থায়নে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধিতার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি সামান্য ব্যাংকের এমডি পদের জন্য…সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে গেল। আর সেই ক্ষোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, দুর্নীতি করতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিলে অনেকে বলেছিলেন এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের টাকায় এই খরস্রোতা নদীতে সেতু করা সম্ভব নয়। আমি জানি, অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমার সঙ্গে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়—সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম। বঙ্গবন্ধুর সুরে বলতে চাই—বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র। বিএনপি এসে কী করেছে? সবার ওপর অত্যাচার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা। কাউকে ছাড়েনি তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশকে গড়তে চায়। আজকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য—এ দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আমি আমার সব জমি এখন চাষ করি। এখন গণভবন একটা খামার হয়ে গেছে। সেখানে যা যা পারি উৎপাদন করি। সবাইকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিজেদের ঠিক করতে হবে। বরং আমরা অনেক দেশকে সাহায্য করতে পারব।’
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন আপনাদের ?উপহার দিয়ে গেলাম। আবারও ক্ষমতায় গেলে ফরিদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। আপনারা ফরিদপুরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। এই আহ্বান জানাই।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেলেস্টেশনে পদ্মা রেল সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা নদী রেলে করে পাড়ি দেওয়া, আজ সেই স্বপ্ন পূরণের দিন। এই দেশ আমাদের, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন বন্ধের পর আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে তা করে দেখিয়েছি। আবারও প্রমাণ করেছি, বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি—এই আমরা গড়ে তুলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে আমি আহ্বান জানাই, জাতির ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচনের ধুয়া তুলে আমাদের প্রতিদিন ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে একজন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে এবং ভোট চুরি করা ছাড়া কোনো দিন ক্ষমতায় আসে নাই।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। বক্তব্য দেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।