বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সভা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া রেজ্যুলেশনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ বিষয়ে যে কোনো বিবৃতি বা রেজ্যুলেশন দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করতে তারা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। গত বুধবার ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি সার্কেলের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা মিশন: সঠিক তথ্য জেনে নিই’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এসব তথ্য জানান।

সেমিনারে মূল আলোচক ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ। আলোচনায় অংশ নেন ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. রশিদ রায়হান বিন, স্টাডি সার্কেল লন্ডনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, ব্রিটেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক

সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন, ব্রিটেন স্টাডি সার্কেলের কো-অর্ডিনেটর জামাল আহমেদ খান, গৌরবের

৭১-এর সভাপতি ব্যারিস্টার ইমরান আহমেদ জনি। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ। সেমিনারে বক্তারা গত সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া জয়েন্ট মোশন রেজ্যুলেশনসহ ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে চালানো অপপ্রচারের নিন্দা জানান এবং অপপ্রচার প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বেসরকারি সংস্থা অধিকার ভুল তথ্য দিলে বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যম ফ্যাক্ট চেক না করেই তা প্রকাশ করে। ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে তারা নাশকতা ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।

রাশিদ রায়হান বিন বলেন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যবেক্ষকদের উচিত বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে প্রচারিত সংবাদগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখা। কারণ ভুল তথ্য মানুষকে ভুলপথে ধাবিত করে। ভুল তথ্য কীভাবে গণহত্যার দিকে নিতে পারে, তার প্রমাণ রুয়ান্ডা আর মিয়ানমার। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে যা আলোচনা হয় তার মধ্যেও অনেক ভুল তথ্য থাকে। এসবের পেছনে কী কোনো ধরনের লবিং মানি ব্যবহার করা হয় বা এসব ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে এগুলো যাচাই করার দায়িত্ব ইউরোপীয় পার্লামেন্টের।

ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ সংবাদ উপস্থাপনে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভূমিকা ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে মনে করেন। এনজিওগুলো বেসরকারি সংস্থা হলেও প্রায় সব এনজিওরই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কিছু সংস্থা হয়তো নিজস্ব স্বার্থে তথ্য বিকৃত করে প্রচার করে, যার ফল হয় ভয়াবহ। ১০-১২ বছর আগে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কটাক্ষমূলক নিউজ হতো। এখন বাংলাদেশ অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবাধিকার চর্চা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, দেশের উন্নয়ন এবং আর্মিকে ব্যারাকে রাখার মতো কাজগুলোর জন্য দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এত কাজ বর্তমান সরকার ছাড়া আর কেউই করেনি। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, অনেক বড় বড় গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে অনেক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করে। এর পেছনে একমাত্র কারণ হলো,কিছু মানুষ বর্তমান সরকারকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৭তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের জিডিপির গ্রোথ অনেক পশ্চিমা দেশের চেয়ে দ্রুত ও বেশি। এসব খবর প্রকাশ করা হয় না। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বলছে, অধিকারের আদিলুর রহমানের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। অথচ তার শাস্তি হয়েছে দেশের ভেতরে নাশকতা ছড়ানোর অভিযোগে। তার দেওয়া ভুল তথ্য দিয়ে বিবিসির মতো গণমাধ্যমও ভুল সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাই যে কোনো বিবৃতি দেওয়ার আগে সে তথ্যগুলো যাচাই করে নেওয়া জরুরি।

এদিকে, ইইউ টুডের এক প্রতিবেদনে জার্মান এমইপি ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ জানান, তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেজ্যুলেশনের বিপক্ষে ছিলেন। কারণ এনজিও থেকে আসা তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া রেজ্যুলেশনগুলো নিয়ে তিনি সন্দিহান থাকেন। তথ্যগুলো দুবার চেক করা হয় না। তাই তিনি দূতাবাসগুলোকে তাদের যুক্তি দেওয়ার সুযোগ দেন এবং নিজেও চেক করেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও মামলাটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কারণ একজন এনজিওকর্মী পুলিশি সহিংসতার বিষয়ে একটি ভুল বিবৃতি দিয়েছিলেন,যা সহিংসতার কারণ হতে পারত। তেমন ঝুঁকি ছিল। এ ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো ইউরোপেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.