আমূল বদলে যাবে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জীবনযাত্রা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের সঙ্গে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতদিন ছিল সড়ক পথনির্ভর। এখন তাতে যুক্ত হয়েছে রেলপথ। আর এই রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সূচনা করছে নতুন এক দিগন্ত। এটি আমূল বদলে দেবে পুরো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জীবনযাত্রাকে। পাল্টে দেবে এখানকার অর্থনীতিকেও। নানা কাঠখড় পেরিয়ে এ রেলপথ প্রস্তুত হচ্ছে। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন সংস্কার করা হচ্ছে দ্রুততম সময়ে। যেখান থেকে পাথর ও মাটি সরে গেছে, সেখানে নতুন করে ভরাট করা হয়েছে। যে পয়েন্টে লাইন বাঁকা হয়ে গিয়েছিল, সেই পয়েন্টে সোজা করা হয়েছে লাইনও। এ রুটে মোট সাত জোড়া ট্রেন চলাচলের প্রস্তাব দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী দিনে একটি ট্রেন চলাচল করলেও কালুরঘাট সেতুর কাজ অসমাপ্ত থাকায় এখনই বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে না যাত্রীবাহী ট্রেন। এ সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হলে আগামী বছর থেকে চলবে বাণিজ্যিক ট্রেন।
বিশেষজ্ঞরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেললাইন উদ্বোধনের পক্ষে মতামত দিলেও কিছু কাজ বাকি রেখে আপাতত উদ্বোধন করা হচ্ছে রেললাইন। এতে কোনো অসুবিধা হবে না বলে নিশ্চিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলপথে যারা কক্সবাজার ভ্রমণে যাবেন তাদের যাতায়াতেও কোনো সমস্যা হবে না। আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেই উদ্বোধন করা হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত এই রেললাইন। আগামীকাল রোববার পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে এই লাইনে। যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছুটবে ১২ নভেম্বর থেকে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এই রেলপথে ১৪৫টি সেতু ও কালভার্ট করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রয়োজন মনে হওয়ায় মোট ১৭৩টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন করে যেসব কালভার্ট করার কথা উঠে এসেছে, সেগুলো করা হবে শুষ্ক মৌসুমে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার অংশটি পরীক্ষামূলক চালু করতে এখন প্রস্তুত। কালুরঘাট সেতু সম্পন্ন হলে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন যাবে কক্সবাজার। এখন শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ চলছে বিভিন্ন পয়েন্টে। কয়েক দিনের মধ্যে এগুলো শেষ করে টেস্ট ট্রায়ালে যাব।
স্বপ্নের শুরু ২০১০ সালে
২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। ২০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হওয়ায় মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
ট্রেন চলবে শুধু উদ্বোধনের দিন
কালুরঘাট সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় ১২ নভেম্বর উদ্বোধনের দিন শুধু ট্রেন চলবে। সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হলে আগামী বছরের শুরুর দিকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চলবে ট্রেন। রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ জানায়, কালুরঘাট সেতু সংস্কার হওয়ার আগেই পটিয়া রেলস্টেশনে ছয়টি বগি ও ২২শ সিরিজের একটি ইঞ্জিন নিয়ে রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের দিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এই ইঞ্জিন ও বগি ব্যবহার করা হবে।
প্রস্তুত ঝিনুকের আদলে হওয়া দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পে তৈরি করা হচ্ছে নান্দনিক একটি রেলস্টেশন। কক্সবাজারে তৈরি হওয়া এই স্টেশনেরও চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। এটি উন্মুক্ত করা হলে দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দর একটি স্থাপনা হবে বলে মনে করেন প্রকল্প পরিচালক। কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এই আইকনিক রেলস্টেশন। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
লোহাগাড়াতে আন্ডারপাস তৈরির কাজ শেষ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি অভয়ারণ্যের বুক চিরে গেছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত রেলপথ। প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলপথ গেছে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ওপর দিয়ে। হাতিসহ অন্যান্য প্রাণী নির্বিঘ্নে চলাফেরা করার জন্য ৩টি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বন্যার কারণে এলিফ্যান্ট ওভারপাসে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করার আগেই বেশ কিছু পিলার বাঁকা হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি ধসে নিচে নেমে যাওয়ায় বাউন্ডারির পিলার বাঁকা হয়ে যায়। পরে এগুলো মেরামত করা হয়। তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের আগেই রেলপথের কাজ শেষ হবে। যদিও কিছু সিভিল ওয়ার্ক বাকি রয়েছে। চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু বলেন, দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। রেলপথের কারণে এ অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল বদলে দেবে এই রেলপথ। রেললাইনকে ঘিরে তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্প এলাকা। মানুষের সময় সাশ্রয় হবে। সাশ্রয় হবে অর্থও।