গ্লোবাল গেটওয়ের তহবিলে অংশীদার হওয়াই টার্গেট
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ব্রাসেলস সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে সফর হলেও এ সুযোগে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধ ও মহামারির প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতের মধ্যে গ্লোবাল গেটওয়ের তহবিলে অংশীদার হওয়াই অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী এই সফরে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী চার দিনের সফরে ব্রাসেলসের উদ্দেশে রওনা হবেন আগামী ২৪ অক্টোবর। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২৫ ও ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রাথমিক লক্ষ্য ২০২৭ সাল নাগাদ বহির্বিশ্বে কানেকটিভিটি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে ইউরোপের ৩০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ। যদিও বিনিয়োগের বড় অংশ ঋণ; তবে উল্লেখযোগ্য অংশ মঞ্জুরী সহায়তাও থাকবে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে তহবিলের পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপীয়দের এই উদ্যোগে শামিল হয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদারে তহবিলে অংশীদার হতে চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর অবস্থিত। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং গোটা বিশ্বের সরকারের প্রতিনিধি, বেসরকারি খাত, শীর্ষ স্থানীয় থিংকট্যাংক, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন।
পাশাপাশি, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর আন্দোল এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ চাপের মধ্যে ইইউ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে আমন্ত্রণ জানাল।
গ্লোবাল গেটওয়ে স্ট্র্যাটেজি অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) কিংবা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আদলে ইউরোপীয় কৌশল। তবে এই কৌশল প্রধানত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে আবর্তিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে চীনের বিআরআইয়ে যোগ দিয়েছে। আইপিএসের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরামের কোনো কোনো উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের লক্ষ্য শুধু অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগও নয়; বরং ইউরোপীয় ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করা।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক লক্ষ্য পূরণে প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে ব্রাসেলস সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক তহবিলের বিষয়টি সাধারণত ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস আলোচনা করে ঠিক করে থাকে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ব্রাসেলস সফরের মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কে কোনো ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করার চেষ্টা এই সফরে হতে পারে।’
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সহযোগিতা রয়েছে। ইউরোপীয় বাজারে অস্ত্র বাদে বাংলাদেশের সব পণ্য বিনাশুল্কে প্রবেশ করতে পারে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা তা পর্যালোচনায় প্রাক নির্বাচনি মিশন পাঠিয়েছিল। মিশন পূর্ণাঙ্গ মিশন না পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছে। ইইউ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে, তহবিল সমস্যার কারণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ। তবে ছোট আকারের কারিগরি দল পাঠাতে পারে। পাশাপাশি, ইইউ পার্লামেন্টেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে জিএসপি সুবিধা বন্ধ হবে। তখন জিএসপি প্লাস নামের একই ধরনের শুল্ক সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ। ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে তা জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে সহায়ক হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফর প্রধানত উন্নয়নবিষয়ক। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে এবার নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয় বিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ গ্লোবাল গেটওয়ে থেকে তহবিলও পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভেন ডের লেইনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অবশ্যই হবে। তবে অন্য নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক কতটা সম্ভব হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সম্মেলনে সময় খুব কম। দুদিনের সম্মেলনে নিয়মিত অধিবেশনে অংশ নেবার পর যতটা সময় পাওয়া যায় সেই সুযোগে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা অবশ্যই করা হবে।’ এ বিষয়ে আর বিস্তারিত তিনি কিছুই বলেননি।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পূর্বে গ্লোবাল গেটওয়ে সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানকে ইতিবাচক বলছেন অনেকেই। ডিসেম্বরে আবুধাবিতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আবুধাবি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগদান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জলবায়ু সম্মেলনেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানাতে পারেন।