প্রেম শ্বাশত, প্রেম মানে না জাতি ধর্ম! প্রেমের টানে আমেরিকান তরুণী এখন পাবনার ঈশ্বরদীতে!
নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রেম শ্বাশত, প্রেম মানে না জাতিো ধর্ম-বর্ণ! পৃথিবীর আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত, মানব জন্মের ইতিহাস এবং প্রেমের মহিমা কীর্তন একইসূত্রে গাঁথা ।
সৃষ্টির প্রথম নর-নারী আদম -ঈভ পরস্পরের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। গন্ধর্ব ফল সেই অন্ধ অমর প্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভালোবাসা চিরন্তন সত্য এবং শাশ্বত। বিধাতার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি ভালোবাসা। চোখে দেখা যায় না , অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুভব করতে হয়, মনের গভীরে এক কিশলয় বিকশিত হতে হতে মহিরুহে পরিনত হয়। সব মিলিয়ে বিনা সুতোয় গাঁথা এক অদ্ভুত অদৃশ্য বন্ধনের তীব্র টানই ভালোবাসা।
পুরাতন সব প্রেম উপাখ্যানের মত ২০ বছরের হারলি এবেগেল আইরিন ডেভিডসন নামের আমেরিকান এক তরুণী প্রেমের টানে বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী চলে এসেছেন। ইতোমধ্যে সে ২৭ বছরের যুবক আসাদুজ্জামান রিজুকে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করেছেন। উৎসুক দেশি-বিদেশীরা এই নবদম্পতিকে এক নজর দেখতে ভীড় জমিয়েছে।
জানা যায়, আসাদুজ্জামান রিজু ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পিয়ারাখালী মহল্লার আব্দুল লতিফের ছেলে। তিনি কম্পিউটার সফটওয়্যার অ্যান্ড হার্ডওয়্যার কাজের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করেন। ওই তরুণী আমেরিকার কেন্টাকি প্রদেশের জর্জটাউন শহরের বাসিন্দা। ঈশ্বরদী শহরের পিয়ারাখালি এলাকার মনিরুল ইসলামের ৬ তলা বাড়ির ২য় তলার একটি ইউনিট ভাড়া নিয়ে নতুন সংসার পেতেছেন এই দম্পতি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বছর খানেক হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তারা দুজন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমেরিকার মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন ডেভিডসন। গত শনিবার (২১ অক্টোবর) রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে পরদিন রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে পারিবারিকভাবে ঢাকায় বিয়ে সম্পন্ন করেন। এরপর বিকেলে ঈশ্বরদীর গ্রামের বাড়িতে আসেন। ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আসাদুজ্জামান রিজুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বিয়ের আগেই ডেভিডসন খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন।
আসাদুজ্জামান রিজু জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই পরিণয়ে আবদ্ধ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা উভয়ে ভালবেসে বিয়ে করে সুখের সঙ্গে বসবাস করছি। আমার বাসায় প্রতিদিন অনেক লোকজন আসছেন আমেরিকান তরুণীকে দেখতে। আমাদের সঙ্গে সেলফি তুলে তাদের শখ পুরণ করছেন। আমরা সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চাই। সুখে দুখে দুজন পৃথক না হওয়ার অঙ্গিকার করছি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
বাসাটির পরিধি ছোটখাটো হওয়ার কারনে নতুন বাসা ভাড়া নিতে হয়েছে। বাড়ির পাশেই মনিরুল ইসলামের বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি। এখন বাসায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কাটা ও গোছগাছ করতে সময় কাটছে তাদের। হারলি এবেগেল আইরিন ডেভিডসন ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, আমি এখানে এসে ভালো আছি, আমার ভালো লাগছে।
ঈশ্বরদী শহরের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম বলেন, ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমানবিক প্রকল্প হওয়াতে রাশিয়া, বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের তরুণীদের দেখলেও এই প্রথম কোন আমেরিকান তরুণী আমাদের এলাকায় এসেছে। আমরা দেখতে আসছি। খুবই ভাল লাগছে।
মাইনুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, আমেরিকান মেয়ে বলে কথা, তাও আবার আমাদের এলাকার এক যুবকের সঙ্গে প্রেম করে চলে আসছে। আবার বিয়েরও হয়েছে। তাদের একনজর দেখতে শতশত মানুষ বাড়িতে ভিড় করছে। এজন্য আমরাও দেখতে আসছি।
আসাদুজ্জামান রিজুর বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, আমার ছেলের কাছে যেহেতু ওই মেয়েটা আসছে তাই আমরা পারিবারিকভাবে এ বিয়ে মেনে নিয়েছি। ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে ঢাকার একটি কাজি অফিসের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দিয়েছি। ওদের নতুন সংসারের জন্য যাবতীয় কিছু করে দেওয়া হচ্ছে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইসাহক আলী মালিথা বলেন, মানুষের থেকে শুনেছি আমেরিকান থেকে একটি মেয়ে প্রেমের টানে ঈশ্বরদীতে এসে বিয়ে করছেন। আমিও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়েছি। তারা বেশ ভালো আছে। আমরা নবদম্পতির জন্য শুভকামনা করছি।