রাজধানীতে দুই দলের সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা, নিরাপত্তা জোরদার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এক দফা দাবি আদায়ে রাজধানীতে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সারাদেশ থেকে সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় দলটি। তবে মহাসমাবেশের ভেন্যু নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। কারণ, বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করলেও অনুমতি চায়নি। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপিকে যেখানে অনুমতি দেওয়া হবে সেখানেই মহাসমাবেশ করতে হবে।
জানা যায়, ২৮ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর এক কিলোমিটারের মধ্যে মহাসমাবেশ করতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। আওয়ামী লীগ গুলিস্তানে ও জামায়াত মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে। আর বিএনপি নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করলেও অনুমতি চায়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হবে না জানানো হয়েছে। তাই জামায়াত শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগকেও এখনো অনুমতি দেয়নি পুলিশ। আর বিএনপিকে জানানো হয়েছে, যেখানে অনুমতি দেওয়া হবে সেখানেই তাদের মহাসমাবেশ করতে হবে। এদিকে ভেন্যু নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিএনপি সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করে মহাসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যেই সারাদেশের নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে দলের পক্ষ থেকে এক লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করছে। তারা আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাদের বাসা এবং বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, এর আগে গতবছর ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। প্রথমে পুলিশের অনুমতি না চাইলেও পরে লিখিতভাবে আবেদন করে পুলিশের কাছে। কিন্তু বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করতে বলা হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারা করবে না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি নিয়ে বেশ ক’টি শর্তসাপেক্ষে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকেই সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি পেশ করে দলটি। এর পর ধারাবাহিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে এ বছর ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। মহাসমাবেশ থেকে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ ও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ঘেরাওসহ আন্দোলনের লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে দলটি। ওই দিনই গুলিস্তানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একই দিন একই সময়ে এক কিলোমিটার দূরত্বে দেশের বড় দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবে ওইদিন জামায়াতকে মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনো কোনো দলকে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে বিএনপি মহাসমাবেশের যে অনুরোধ করেছে, কিভাবে করেছে সেটা পুলিশ কমিশনার জানেন। ঢাকায় কোন জায়গায় মহাসমাবেশ করলে এত লোকের স্থান সংকুলান হবে সেটা পুলিশ কমিশনার দেখবেন। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা নাকি সারাদেশ থেকে যারাই বিএনপি করে, তাদের নিয়ে আসবে। কোনো সদস্যই নাকি বাদ থাকবে না। তেমনই যদি হয়, এত লোক ঢাকায় এলে অন্য ধরনের একটা পরিস্থিতি হতে পারে। সেজন্যই আমাদের কমিশনার তাদের কোথায় সমাবেশ করতে দেবেন, সেটি তিনি বুঝবেন। সেভাবেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি জানান, জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। তাই তারা জামায়াতের ব্যানারে যদি সমাবেশ করতে আসে, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এদিকে বিএনপি ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করার জন্য অনুমতি চায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মহাসমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি চাওয়া হয়নি। তবে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দেওয়া হবে না। কারণ, আমরা আন্দোলন করছি মানুষের ভোটের অধিকার আদায় ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই পুলিশ অনুমতি দিলেও বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে না দিলেও নয়াপল্টনে করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতির বিষয় সংবিধানের কোথাও নেই। তাই নয়াপল্টনে বিএনপিকে মহাসমাবেশ করতে না দিলে যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে নেতাকর্মীরা সারা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়বে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে জনতার অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশ-প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকা যেন রাজনীতিবিদদের মতো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দমতো জায়গায় কর্মসূচি পালন করবে, এটি তাদের অধিকার।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ডিএমপক্ষ থেকে যদের যেখানে অনু দেওয়া হবে, তাদের সেখানেই সমাবেশ করতে হবে। তাই আমরা আশা করি, সেই দায়িত্বশীলতার জায়গায় তারা থাকবে। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই, আইনি কাঠামোতে দেওয়া শর্তগুলো যেন তারা অনুসরণ করে। ঢাকা শহরে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ কোনো মাঠে করাই শ্রেয়। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটি আমরা বলেছিও। জামায়াতের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা একটি দরখাস্ত করেছে। এই দলটির বিষয়ে হাইকোর্টের অবজারভেশন আছে। শাপলা চত্বরের মতো জায়গায় জামায়াতের মতো দলকে অনুমতি দেওয়া হবে না।
বুধবার নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানেই অনুমতি দেওয়া হবে সেখানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এ রকমের বক্তব্যে এটাই প্রমাণ হয় যে, দেশের জনগণ এখন পরাধীন। দেশে রাজনৈতিক দলের কর্মকা-, মত প্রকাশ ইত্যাদি সবকিছুই এখন পুলিশের ছাড়পত্রের ওপর নির্ভর করছে। তাই বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রতি পুলিশের ক্রোধ প্রকাশ পাচ্ছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্ষরিক অর্থেই সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা তো মালিক নন। তারা কিভাবে নির্ধারণ করে দেয় রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ কোথায় হবে? সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তারা ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে নিয়ে ঢাকা মহানগরকে আতঙ্কের জায়গা বানাতে চাচ্ছে।
নির্দিষ্ট স্থানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেব না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে রাজধানীর নির্দিষ্ট স্থানে সমাবেশ করে চলে গেলে সরকার বাধা দেবে না। বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে সচিবালয়ে। সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর সরকার ঢাকার প্রবেশপথ কেন বন্ধ করবে? ঢাকায় মানুষ আসবে ব্যবসায়িক কাজে, চাকরির কাজে। অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে এসে অফিস করেন। কাজেই ঢাকার পথ আমরা কেন বন্ধ করব? আমরা ঢাকার কোনো পথ বন্ধ করব না। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে চলে যায়, আমরা বাধা দেব না।
এখনো কোনো দলকেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সমাবেশের যে অনুরোধ করেছে, কীভাবে করেছে সেটা পুলিশ কমিশনার জানেন। ঢাকায় কোন জায়গায় করলে, এত লোকের জায়গা দেবে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, তারা না কি সারাদেশ থেকে যারাই বিএনপি করে, তাদের নিয়ে আসবে। কোনো সদস্যই না কি বাদ থাকবে না। এমনই আমরা শুনছি। তেমনই যদি হয়, এত লোক ঢাকায় এলে অন্য ধরনের একটা পরিস্থিতি হতে পারে। সেজন্যই আমাদের কমিশনার তাদের কোথায় সমাবেশ করতে দেবেন, সেটি তিনি বুঝবেন। সেভাবেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।
জামায়াতকে আমরা অনুমতি দেইনি, আমরা তাদের কোনো অনুমতি দেই না। জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত দল নয় এখনো পর্যন্ত। কাজেই জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে যদি কেউ আসে, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিজয় দিবস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বছর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন সামনে হওয়ায় প্যারেড অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি চিন্তা করেন প্যারেড হবে, তাহলে হবে। কেন প্যারেড হবে না, সে ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় বৈঠক ॥ বিশেষ প্রতিনিধি জানান, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে একটি অশুভ মহল নাশকতা, নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও সন্ত্রাসের চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। কেউ যেন অস্ত্র, বিস্ফোরক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে না পারে সেজন্য যে কোনো সমাবেশকে ঘিরে নাশকতা-নৈরাজ্যকে প্রতিহত করার মতো নিরাপত্তা হুমকির কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নাশকতা ও সহিংসতার চেষ্টা করলে তা মোকাবিলায় র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স, স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যথাযথ অনুমতি ছাড়াই আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি রাজধানীর নয়াপল্টনে, আওয়ামী লীগ গুলিস্তানে ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে।
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। একই দিনে ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে গুলিস্তানে মহাসমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে জামায়েতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলো। ওইদিন সমাবেশে ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। একইদিন বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আর সমমনাদের মাঠে থাকা, সব মিলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও করণীয় নির্ধারণে দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিশৃঙ্খলার গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থেকে পুলিশ নিচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি।
আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে বিএনপি সমাবেশস্থলে বসে যাওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করে ধ্বংসাত্মক, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হামলা বা লুটপাট করার পাঁয়তারা করার চেষ্টা করলে সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিএমপির বৈঠক সূত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ঢাকার দুই কোটি নাগরিককে অবরুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। অবরুদ্ধ কাউকে করতে দেওয়া হবে না। সমাবেশ সামনে রেখে তালিকা ধরে ওয়ারেন্টভুক্তদের গ্রেপ্তারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সন্ত্রাসী, অপরাধীদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের পর যাতে সমাবেশস্থলে কোনো নেতাকর্মী অবস্থান করতে (বসে পড়তে) না পারে সেজন্য পুলিশ নিচ্ছে বিশেষ প্রস্তুতি। সহিংসতা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব বিষয় জানিয়ে ডিএমপি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সমাবেশ ঘিরে তিন স্তরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশের আগের দিন থেকে ঢাকায় প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার করা হবে। ঢাকার প্রতিটি হোটেল ও মেসে নিয়মিত তল্লাশি চালাবে পুলিশ। কারণ নাশকতা কিংবা সহিংসতার জন্য কেউ আগ্নেয়াস্ত্র অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য রাখতে পারে। চেকপোস্ট প্রয়োজন হলে করা হবে। ঢাকাবাসীর নিরাপত্তায় যা যা দরকার তাই করা হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত। আগামী ২৮ অক্টোবর পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি নিশ্চিত করতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টগুলোতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হবে।
নিরাপত্তা জোরদারে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবেন কর্মকর্তারাও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি ঢাকার প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসাবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই। তবে জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি যারা করার তারা করবে। জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিতে আমরা প্রস্তুত। এ বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশনের পূজাম-প পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেছেন আইজিপি।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নাশকতার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। খন্দকার আল মঈন বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট জোরদার করবে র্যাব, যাতে কেউ নাশকতার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। একইভাবে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাবে র্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে নগরবাসীকে সবধরনের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে র্যাব। সমাবেশ কেন্দ্র করেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ মহাসড়কগুলোতে প্যাট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে, যাতে করে সাধারণ জনগণ নিশ্চিন্তে তাদের কাজগুলো করতে পারেন।