টাকা ডলার বিনিময় হারে নতুন ব্যবস্থায় যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নিকট মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর দর ছেড়ে দেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনকার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ পদ্ধতির পরিবর্তন করে নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করা হবে। নতুন ব্যবস্থায় বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি মধ্যবর্তী দর ঘোষণা করে তার সঙ্গে সর্বোচ্চ কত শতাংশ ওঠানামা করবে, তার করিডোর থাকবে। বর্তমানে সুদহারের ক্ষেত্রে স্মার্ট রেটের সঙ্গে যেমন করিডোর রয়েছে, বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও তেমনই হবে। আইএমএফের পরামর্শ নতুন এ ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশের ওপর আইএমএফ প্রকাশিত কান্ট্রি রিপোর্টে নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থার বিষয়ে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিআইডিএসের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে বিনিময় হারের নতুন ব্যবস্থা চালুর কাজ চলছে বলে জানান। এ ছাড়া আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশের আগে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ বিষয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন আইএমএফ মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, বিনিময় হারের নতুন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নতুন ব্যবস্থায় বাহারের সঙ্গে সংগতি রেখে বৈদেশিক মুদ্রার একটি মধ্যবর্তী দর দেওয়া হবে। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ কত শতাংশ ওঠানামা করতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সীমার মধ্যে ব্যাংকগুলো ডলার বেচাকেনা করছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা তদারকি করবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো ডলারের মধ্যবর্তী দর ঠিক করল ১১২ টাকা। এর সঙ্গে তিন শতাংশ ওঠানামা করার সুযোগ রাখল। তখন ১১২ টাকার সঙ্গে  তিন শতাংশের বেশি ওঠানামা করতে পারবে না।

আইএমএফ মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, আইএমএফের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থা চালু করবে; যা হবে সুদহারের করিডোর ব্যবস্থার মতো। বাজারের চাহিদা ও জোগানের ওপর বিনিময় হার ছেড়ে দেওয়ার আগে যা হবে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ। আইএমএফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুরোপুরি ভাসমান বিনিময় হার ব্যবস্থায় যেতে হবে খুব সতর্কভাবে, যাতে করে এই পরিবর্তন কোনো তৈরি না করে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতির অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন ঘটবে; যা বৈদেশিক লেনদেনে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। 

এতে আরও বলা হয়েছে, বিনিময় হার ব্যবস্থা অধিকতর নমনীয় করার জন্য যথেষ্ট তারল্য থাকা জরুরি। আবার দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ডলারের দর অনেক বেড়ে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতির ওপর যা ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের খরচ বাড়তে পারে। আবার বেসরকারি খাতও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ফলে বিনিময় হার ব্যবস্থা নমনীয় করার আগে মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি এবং আর্থিক নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। পরিবর্তন সফল হলে দীর্ঘ মেয়াদে সামগ্রিক অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ডলারের দর ঘোষণা করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি। সর্বশেষ তিন দফায় প্রতি ডলারে ১ টাকা কমিয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং আমদানিতে ১১০ টাকা করা হয়েছে। যদিও অনেক ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২০ থেকে ১২২ টাকা দরে ডলার কিনছে। আমদানিতে ১২৪ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর মানে ঘোষিত দর অকার্যকর। এ রকম বাস্তবতায় ডলারের বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় করার পরামর্শ দিয়ে আসছে আইএমএফ। তবে একবারে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে দর অনেক বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে চাপ তৈরি করতে পারে। যে কারণে নতুন ব্যবস্থায় যাওয়ার পরামর্শ দিল আইএমএফ।

আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বেশ কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। অবশ্য ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের আগে রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেওয়া শর্তে সংশোধন এনেছে সংস্থাটি। আগে বলা হয়েছিল– চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের শর্ত দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। একই দিন এডিবির ঋণের ৪০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এ দুই সংস্থার ঋণের টাকা যোগ হওয়ায় গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠবে। যদিও গ্রস রিজার্ভের সঙ্গে নিট রিজার্ভের হিসাবে বড় একটি পার্থক্য রয়েছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.