দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি মুক্তির বিধান আসছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিবেচনা পাচ্ছে স্বাস্থ্যগত কারণ * প্যারোলের সময়সীমা বাড়ছে * থাকছে বন্দিদের ছুটির বিধানও । সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তির বিধান রেখে সংশোধন করা হচ্ছে ১৩৬ বছরের পুরোনো প্রিজন্স অ্যাক্ট। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত কারণকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে বিচারাধীন বন্দিদেরও মুক্তি বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া প্যারোলে মুক্তির ক্ষেত্রে স্বজনদের মৃত্যু ছাড়াও ছেলে বা মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে ছুটির বিধান রাখা হচ্ছে। নতুন আইনে বন্দিদের পোশাক, সাজা রেয়াত, বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া, খাদ্য, শিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংক চেক এবং দলিল স্বাক্ষরসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। পুরোনো দুটি আইন একীভূত ও সংশোধন করে প্রস্তুত করা হয়েছে বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইনের খসড়া। খসড়াটি জনমত যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সংশোধিত বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইনের খসড়ার ওপর জনমত যাচাইয়ের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপসচিব তাহনিয়া রহমান চৌধুরী বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বর্তমানে প্রচলিত দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট এবং দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট একীভূত, সংশোধন এবং যুগোপযোগীকরণের লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় খসড় প্রণয়ন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইনের খসড়ায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ দণ্ডপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন বন্দিদের মুক্তির বিধানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের সুপারিনটেনডেন্ট এবং কারা কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে ৬ মাসের কম সাজা রয়েছে এমন বন্দিরা মুক্তি পাবেন। আর ৬ মাসের বেশি সাজা বাকি রয়েছে এমন বন্দিদের ক্ষেত্রে মুক্তির বিষয়ে সুপারিশের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া বিচারাধীন বন্দিদের স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তির বিধান রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যেসব বিচারাধীন বন্দি দীর্ঘস্থায়ীভাবে অসুস্থতায় ভুগছেন এবং স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতির আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে বিবেচনার জন্য পাঠাবেন সুপারিনটেনডেন্ট। আদালত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিতে পারবেন।

সাপ্তাহিক বা সরকারি ছুটির দিন কোনো বন্দির সাজার মেয়াদ পূর্ণ হলে ছুটির দিনের আগের দিন তাকে মুক্তির বিধান রয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়। বন্দির মুক্তির আদেশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পেলে তা যাচাই-বাছাই করে কার্যকর করার সুযোগ রয়েছে। সাজা রেয়াতের ক্ষেত্রেও বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়েছে সংশোধিত কারা আইনের খসড়ায়। বলা হয়েছে, একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে আদালতের আদেশে ভিন্নরূপ নির্দেশনা না থাকলে কারাদণ্ডসমূহ ক্রমাগতভাবে একটি শেষ হলে অন্যটি শুরু হবে। এছাড়া কোনো বন্দি শর্তাধীন মুক্তি পেলে মুক্ত অবস্থায় অতিবাহিত সময় তার কারাবাস হিসাবে গণ্য হবে এবং ওই অবস্থায় তিনি রেয়াত পাবেন। ছয় মাস বা এর অধিক মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত এমন কোনো বন্দি তবে আমৃত্য কারাদণ্ড প্রাপ্ত নয়, সেক্ষেত্রে কারাগারে সদাচরণ করলে এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে অভিযুক্ত না হলে রেয়াত অর্জন করবে। কারা মহাপরিদর্শক ও জেল সুপার প্রয়োজনে বিশেষ রেয়াত প্রদান করতে পারবেন সংশোধিত কারা আইনে।

প্যারোলে মুক্তির ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে সংশোধিত কারা আইনের খসড়ায়। সমাজে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যেও বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি প্রদান করা যাবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সভাপতিত্বে প্রত্যেক জেলায় এক বা একাধিক প্যারোল বোর্ড গঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট কারাগারের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অথবা জেলার প্যারোল বোর্ডে সদস্য সচিব হবেন। প্যারোল বোর্ডের সার্বিক কার্যক্রম বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। সংশোধিত খসড়ায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ব্যতীত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি প্যারোল আবেদন করতে পারবেন। প্যারোল ছাড়াও শর্তসাপেক্ষে বন্দির ছুটির বিধানও রয়েছে সংশোধিত কারা আইনের খসড়ায়।

বাংলাদেশে প্রথম কারাগার স্থাপিত হয়েছিল ১৭৮৮ সালে। ঢাকায় স্থাপিত এ কারাগারকে প্রথম দিকে বলা হতো ক্রিমিনাল ওয়ার্ড। কিন্তু কারাগারের ব্যবস্থাপনার বিধান সংবলিত একটি কোড তৈরি করা হয়েছিল ১৮৬৪ সালে। এরপর ওই কোড সাতবার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন হয় ১৯৩৭ সালে। ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এরপর বিভিন্ন সময়ে নির্বাহী আদেশে কারাবিধির কতিপয় পরিবর্তন ও সংশোধন হলেও, জেল কোডে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০০৬ সালে চার দলীয় জোট সরকারের সময় জেল কোড সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সূজাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ১৩৬ বছরের পুরোনো কারা আইন সংশোধনের জন্য আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কারাগারগুলো দেখেছি। সেখানে একজন বন্দি যেসব সুবিধা পান, ঠিক সেভাবেই আমাদের কারা আইন সংশোধনের জন্য খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে খসড়া আইনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি অনুমোদন হলে জেল কোডের কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসবে। এই আইন কার্যকর হলে বন্দিরা স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তির সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি তাদের প্যারোলে মুক্তির সময়সীমা বৃদ্ধি হবে। এ ছাড়াও বন্দিদের শ্রেণিবিন্যাস, পোশাক-পরিচ্ছেদ, কর্মসংস্থানেও পরিবর্তন আসবে। মোট কথা এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে কারাগার হয়ে উঠবে বন্দিদের সংশোধনাগার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংশোধিত কারা আইনের খসড়ায় বন্দিদের খাদ্য ও পুষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বন্দির স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মেডিকেল অফিসার তার জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যের পরিমাণ, খাদ্য তালিকা এবং খাদ্য প্রদানের সময় পরিবর্তনের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন। খাদ্য তালিকায় মায়ের সঙ্গে থাকা শিশু, স্তন্যদায়ী মা, গর্ভবতী নারী এবং অন্য যেকোনো প্রকারের বন্দি, যাদের শারীরিক প্রয়োজনে বিশেষ খাদ্য আবশ্যক তাদের জন্য খদ্য তালিকায় বিশেষ খাদ্যের ব্যবস্থা থাকবে। খাদ্য তালিকা প্রস্তুতের সময় যুক্তিসংগতভাবে সম্ভব হলে বন্দির ধর্ম, অঞ্চল ও সংস্কৃতি বিবেচনা করা হবে। খাদ্য যথাযথ ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত, সংরক্ষণ এবং পরিবেশন করা হবে। কারাগারের অভ্যন্তরে কোনো সুবিধাজনক স্থানে সব বন্দির পান করার জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক কারাগারে সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে এক বা একাধিক ক্যান্টিন পরিচালনা করা যাবে। বন্দিরা ক্যান্টিন থেকে ব্যক্তিগত অর্থে খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে পারবেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.