দাম নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাহার হতে পারে ৫ শতাংশ ভ্যাট
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ভোজ্যতেলের বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবদাম নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাহার হতে পারে ৫ শতাংশ ভ্যাটউৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে শতভাগ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব এনবিআরে
টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ভোজ্যতেলের বাজারে। একই সঙ্গে পরিশোধন ব্যয়ও বেড়েছে। উল্লিখিত দুই কারণে এই মুহূর্তে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য কমানো যাচ্ছে না। যে কারণে ভ্যাট তুলে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে সরকার। সেক্ষেত্রে ভোজ্যতেল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে শতভাগ ভ্যাট তুলে নেওয়া হতে পারে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
নতুন সরকার গঠনের পর রোববার দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছেন। পাঁচমন্ত্রীর ওই বৈঠকের একদিনের মাথায় ভোজ্যতেল নিয়ে একটি মূল্যায়নসহ ভ্যাট প্রত্যাহারের চিঠি এনবিআরকে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এছাড়া বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবও পণ্যের বাজারে এসে পড়ছে। তবে এই অজুহাতে অযৌক্তিক মূল্য আদায় মেনে নেওয়া হবে না।
গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। দুই বছরে তা প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছর আগে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা, ২ বছর আগে ৮৪-৮৬ টাকা। আর এখন ১ ডলার কিনতে হচ্ছে ১১০-১১৬ টাকা দিয়ে।
সূত্র জানায়, ভ্যাট না কমিয়ে ভোজ্যতেলের মূল্য সমন্বয়ের চিন্তা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এর প্রভাব কম পড়ছে দেশে। এর একটি কারণ হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যের পতন।
সূত্রমতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এনবিআর। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। কারণ ভ্যাট প্রত্যাহারের সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি জড়িত।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, ভোজ্যতেলের মূল্য কমানোর জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি ঠিক আছে। কারণ এটি পুরোটা আমদানি করতে হয়। ভ্যাট তুলে নেওয়ার পর এ খাতে রাজস্ব আদায় কমবে। এই ঘাটতি রাজস্ব পূরণের জন্য স্বাভাবিক ভ্যাট, আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, এ প্রস্তাব যদি কার্যকর হয় তাহলে এর সুফল যেন সাধারণ ভোক্তারা পান। সরকার দাম কমানোর জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার করবে, ব্যবসায়ীরা যদি আগের মূল্যেই বিক্রি করে তাহলে এর সুফল ব্যবসায়ীদের পকেটে যাবে। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কঠোরভাবে পরিচালনা করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা (২১ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রমজানকেন্দ্রিক অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, দ্য অ্যাসেন্সিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট-১৯৫৬ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ ২০১১ অনুযায়ী ভোজ্যতেল একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। কিন্তু ভোজ্যতেল পরিশোধন ব্যয় ও ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশিয় বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পরিশোধিত-অপরিশোধিত পাম তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পরিশোধিত-অপরিশোধিত পাম তেলের মূল্য হ্রাসে আরোপিত ভ্যাট হ্রাস কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। ইতঃপূর্বে ভোজ্যতেলের মূল্য হ্রাসে ২০২২ সালের ১৬ মার্চ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ অপরিশোধিত সয়াবিন ও পরিশোধিত-অপরিশোধিত পাম তেলের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ নকরেছিল।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য আমদানি পর্যায়ে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পরিশোধিত-অপরিশোধিত পাম তেলের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করার অনুরোধ করা হলো। পাশাপাশি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়। ভোজ্যতেল আমদানির ওপর বর্তমানে ভ্যাট রয়েছে ১৫ শতাংশ।
ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ২০২২ ও ২০২৩ সালজুড়ে কয়েক দফায় ভ্যাট ছাড় দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ভ্যাট ছাড় সুবিধা ছিল গত বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। আমদানি পর্যায়ে শুধু ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড় সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ জানালেও এনবিআর আর তা মানেনি। এর ফলে বর্তমানে ভ্যাট ১৫ শতাংশই রয়েছে।