দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী হচ্ছে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ ধাপে ধাপে আর না বাড়িয়ে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। ২০০২ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া এ আইনের মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরে দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বাড়ানো আইনটির মেয়াদ চলতি বছরের ৯ এপ্রিলে শেষ হবে। তাই এখন থেকে আর এর মেয়াদ না বাড়িয়ে আইনটিকে স্থায়ী আইন হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
এ ছাড়া আসন্ন রোজায় দেশের জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে জরুরি প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রিসভা। পরদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পণ্যগুলোর শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠিও পাঠানো হয়। তবে এনবিআর থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এরই মধ্যে শুল্ক জটিলতায় খেজুরের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রোজায় দাম সহনীয় রাখতে ভোজ্য তেল, খেজুর, চিনি ও চালের আমদানি শুল্ক কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচনের পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সমন্বয়ের ভিত্তিতে এটির ওপর কাজ করতে বলেছেন। আজ (সোমবার) মন্ত্রীদের কাছ থেকে এটির সর্বশেষ অবস্থা জেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীরা কী কী কাজ করেছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরপর প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। রমজানে যে পণ্যগুলোর দরকার হয়, বিশেষ করে খেজুর, ভোজ্য তেল, চিনি ও চাল এই চারটি পণ্যের শুল্কহার হ্রাস করার জন্য এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি নিয়ে এখন তারা কাজ করছে। কী পরিমাণ শুল্ক কমানো হবে সেটি এনবিআর হিসাব করে দেখবে, যাতে দ্রব্যমূল্যের চাপটা মানুষের ওপর কম থাকে।
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রীরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। বেশ কিছু আইটেমের ওপর ইমপ্যাক্ট আসা শুরু করেছে। আগামী রমজান মাস বিবেচনা করে আরও যাতে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেজন্য এই চারটি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
‘বাজারে যেন সরবরাহ ও চাহিদার কোনো ঘাটতি না থাকে, প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন এলসি খোলার পরিমাণ অনেক বেশি আছে, খাদ্য মজুদের পরিমাণ অনেক বেশি আছে এ তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরবরাহে যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সেদিকে সমন্বিতভাবে নজরদারি করতে হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে মন্ত্রীরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাঠে যেভাবে কাজ চলছে, সেটি কনটিনিউ করতে বলেছেন। সাপ্লাই যাতে কোনোভাবেই বিঘ্ন না হয়, সেজন্য এলসি ওপেন করে দিচ্ছেন, যাতে কেউ কোনো কারসাজি করতে না পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসির সমস্যা নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছরের এ সময় ৩৭ হাজার ১০৭ টন খেজুর আমদানির এলসি ওপেন করা ছিল, এবার এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৭৩৪ টন এলসি ওপেন করা আছে। গত বছর একই সময় ৯৭ হাজার ২৮৭ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির এলসি করা ছিল। এবার ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৪ টনের এলসি করা আছে। গত বছর ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭০ টন অপরিশোধিত চিনির এলসি ওপেন হয়েছিল। এবার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৮ টন চিনি আমদানির এলসি ওপেন করা আছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্রব্যমূল্য কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সিরিয়াসলি নিজেদের এঙ্গেজ করেছেন। চালের দামে নিম্নগামী ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে নতুন দামে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৭৩ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৪৬, ৩ লিটার ৫২০ ও ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আমনের রেকর্ড উৎপাদন বছরেও চালের কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকা দাম বেড়েছে। মান অনুযায়ী প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫, ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬, নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ ও কেজি ৩ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকায়।
গত বছরের আগস্টে চিনির কেজিতে ৫ টাকা কমিয়ে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১৩০ ও প্যাকেট চিনি ১৩৫ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে সংগঠনটির সিদ্ধান্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেট চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খেজুরের দাম। এই পণ্যটির শুল্কহার পাঁচ গুণের বেশি বাড়ানোয় আমদানিতেই ৬৬ থেকে ২৬৫ টাকা পর্যন্ত কর বেড়েছে। গত বছর খেজুর আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর মিলিয়ে ১০ শতাংশ শুল্ক হার ছিল। চলতি অর্থবছরে সেই হার বাড়িয়ে আমদানি শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে খেজুরে। এমন করারোপের ফলে এবার রোজার দেড় মাস আগেই বেড়েছে খেজুরের দাম। ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি আজোয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। সবচেয়ে ভালো মানের আজোয়ার কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া মেডজুল ১ হাজার ২০০ ও মিসরের আম্বর ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আজোয়ার মতো বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়েদি, মাশরুখ মরিয়ম, নাকাল, দাব্বাস, সাফারি ও সুগাই প্রজাতির খেজুরের কেজিতে বেড়েছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি দাব্বাস ৩৮০, মাশরুখ ৫০০, সাফারি ৮০০, সৌদি আরবের আম্বর ৮০০, নাকাল ৩৫০ ও ছড়া খেজুর ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।