সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আইনমন্ত্রী সংসদে প্রশ্নোত্তরে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন।
মুজিবুল হক তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে অনেকেটা যুদ্ধের মতো চলছে। যে কারণে সেখান থেকে সাধারণ মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। গোলাগুলিও হচ্ছে। সেই গোলা এসে বাংলাদেশে পড়ছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী সেখানে (বাংলাদেশী সীমানায়) কিছু গোলাও পাওয়া গেছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় জানতে চাই, আমাদের সীমান্ত এবং স্থানীয় লোকজনের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ ব্যাপারে সরকার ওয়াকিবহাল আছে। আজ যে ঘটনা ঘটেছে- ৭৮ জন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) বাংলাদেশে চলে এসেছে। তাদের মধ্যে কয়েজন আহতও আছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের আপাতত একটা স্কুলে রাখা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা আলোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার যেটা হয়েছিল, মর্টার শেল বিস্ফোরণে আমাদের একজন মারা গেছে। ওদেরও একজন মারা গেছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বা প্যারামিলিটারি বাহিনী (বিজিবি) রয়েছে তাদের ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্তের স্কুলগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী সংসদকে জানান, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়। মামলাটি কঠিন উল্লেখ করে তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে তদন্ত করে এ মামলার সুরাহা করবেন বলেও তিনি দাবি করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে আমি সাধুবাদ জানাই। একটা জিনিস আমাদের লক্ষ্য করতে হবে, যারা তদন্ত করে তারা যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন না করতে পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ করা সমীচীন হয় না। তদন্ত করতে সময় লাগে যদি তদন্ত করতে খুব গভীরে যেতে হয় না, সহজে অভিযোগকারী ও অপরাধকারীদের ধরা যায়, তাহলে সেটা তাড়াতাড়ি করা যায়।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, যে মামলাটার (সাগর-রুনি) কথা উনি (হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ) বলছেন, সেটা তদন্ত করা একটু কঠিন। আমি এইটুকু বলতে পারি অবশ্যই তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে তদন্ত করে এ মামলার সুরাহা করবে। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই ধরা হবে। তবে আমি এ মামলার সময় বেঁধে দিতে চাই না। আমি আইনজীবী জানি এটার সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ৭৭৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। আদায়কৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেছে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গুরুত্বপূর্ণ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহে ৭৩টি বিশেষায়িত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার ইউনিট মোতায়েনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
আধুনিক অগ্নিনির্বাপক গাড়ি পাম্প ও উদ্ধার সরঞ্জামাদি সংগ্রহের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সারাদেশে বিদ্যমান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনসমূহকে আধুনিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অধীনে ১৩টি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ৭৩টি বিশেষায়িত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার ইউনিট মোতায়েন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প দুইটি অনুমোদিত হলে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে।