পরিবর্তন আসছে বিধিমালা ও আচরণবিধিতে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পরিবর্তন আসছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিতে। আজ এই নির্বাচনের বিধিবিধান সংশোধন নিয়ে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ভিন্ন কিছু চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রার্থীদের জনসংযোগ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ সময় প্রার্থী তার পাঁচজন কর্মী সমর্থক নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, সাক্ষাৎ ও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে তা কোনো ধরনের বৈঠকের মাধ্যমে নয়। এ জন্য নির্বাচন কমিশন প্রচারণা ও জনসংযোগ আলাদা আলাদা রাখার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। একইভাবে প্রার্থীর চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। যদিও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসির আইন সংস্কার কমিটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। আজ নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসির আইন সংস্কারবিষয়ক কমিটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিমালায় কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাবণা তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি জামানতের টাকার পরিমাণ বাড়ানো এবং জামানত রক্ষার জন্য প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়ানোর বিষয় রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ অথবা ২ লাখ টাকা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার বিষয় আলোচনায় চলছে। এছাড়া এখন কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ বা সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সেই বিষয়ে সংশোধনী এনে ছয় ভাগের এক ভাগ বা ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত করার বিধান করার চিন্তা করা হচ্ছে। এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে আজ ২৮তম কমিশন সভা ডেকেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সভার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে- ক) উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩-এর সংশোধন সংক্রান্ত। খ) উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬০-এর সংশোধন সম্পর্কিত। গ) বিবিধ। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে মূলত দলীয় প্রতীকে। এর বাইরে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনি এলাকার ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়।
এ বিষয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিষয়ে ইসি সচিবালয় হয়তো কোথাও থেকে ‘ফিডব্যাক’ পেয়েছে যে এটা না রাখাই ভালো। আবার অনেকে বলছেন, বিধানটি না রাখলে সমস্যা হবে। এ বিষয়ে মিশ্র মতামত আছে। নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব আসার পর তারা ভালো মন্দ দিক বিবেচনা করবেন। আলোচনা না করে এখন এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪৮৩টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা এবার স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপিসহ অন্য দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত কিছুই বলছে না।
এদিকে উপজেলা পরিষদের ভোট আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবারের নির্বাচনে কত উপজেলায় ব্যালট ও কত উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে তা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ইসি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের নানা ধরনের মতামত এসেছে বৈঠকে। তবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রশাসন ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিলে, সেক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। তবে জেলা নির্বাচন অফিসারকে যদি রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের কথা বলেছে ইসি। সম্প্রতি ইসির আনুষ্ঠানিক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের মালামাল ক্রয়ের সময় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালামালও কেনাকাটা শেষ করেছে ইসি। প্রস্তুত রয়েছে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাগজও। এদিকে এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে রোজার শেষ দিকে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। প্রথম ধাপ শুরু হবে আগামী ৪ মে। এরপর ১১ মে দ্বিতীয়, ১৮ মে তৃতীয় ও ২৫ মে চতুর্থ ধাপে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। নির্বাচন কমিশনের ২৭তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত আসে।