ইবিতে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরিতে গাছ কাটায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরিতে দুই যুগের বেশি পুরোনো তিনটি কড়ই গাছ কেটেছে প্রশাসন। এছাড়া দুই একাডেমিক ভবনের মাঝে এ মঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে হঠকারী উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে এর প্রতিবাদে সোমবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়াও তারা বৃক্ষনিধন বন্ধের দাবিতে প্রশাসন বরাবর লিখিত দিয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরির পরিকল্পনা নেয় প্রশাসন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঞ্চের কাজ শুরু করতে এ দুই ভবনের মাঝামাঝি অবস্থিত তিনটি কড়ই গাছ কাটা হয়েছে। ২০০০ সালের দিকে নিজের টাকা দিয়ে ওই গাছগুলো লাগিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ। তিনি বলেন, প্রশাসনের তড়িঘড়ি করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করা যেত। এখানে প্রশাসন তাদের অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে।
এদিকে গাছ কেটে মঞ্চ তৈরির প্রতিবাদে সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা বলেন, প্রশাসনকে প্রতিটি কাটা গাছের বিনিময়ে একশো নতুন গাছ রোপণ করতে হবে। পরে বেলা ১১টায় ওই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। গাছ কাটার প্রতিবাদে গণ স্বাক্ষর সম্বলিত প্রতিবাদ লিপি ও দিনব্যাপী ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’। এছাড়া উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন ‘গ্রীণ ভয়েস’ প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেয়। পরে বেলা ১২ টার দিকে ‘ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’র সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এদিকে প্রশাসন কাটা গাছগুলোকে মৃত দাবি করলেও সরেজমিনে দেখা যায় তিনটি গাছই জীবিত ছিল। সকল গাছে কচি পাতা বের হতেও দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গাছ না কেটে বিকল্প জায়গায় মঞ্চ তৈরি করা যেত। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা হোক। একাডেমিক ভবনের পাশে আমরা মুক্ত মঞ্চ চাই না। প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন এবং উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ. ব. ম. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাংস্কৃতিক চর্চা করা আমাদের উচিত। তবে তার জন্য আলাদা জায়গা হলে বেশি ভালো হয়। নাহলে একাডেমিক ভবনের পাশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে ক্লাস পরীক্ষার কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ. কে. এম শরীফ উদ্দীন বলেন, প্রশানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাছ কাটা হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেই গাছ কাটা হয়েছে। কাজের প্রয়োজনে গাছ কাটাই লাগে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে গাছ লাগানো হবে।