ঈদের আগেই ‘সুখবরের’ আশা : জিম্মি নাবিক উদ্ধারে আলোচনায় অগ্রগতি
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ও ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পর দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তবে এখনো মুক্তিপণ না চাইলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের আলাপে অগ্রগতি আছে বলে জানিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ। দস্যুদের সঙ্গে দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছানোর আশা করছে তারা। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থা এবং বিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপও অনেকটা এগিয়েছে।
এদিকে জিম্মি নাবিকদের জাহাজে চলাচলে তেমন কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। নাবিকরা তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও পারছেন। প্রথমদিকে গাদাগাদি করে রাখা হলেও নাবিকরা এখন নিজ নিজ কেবিনে অবস্থান করতে পারছেন। শুরুর দিনগুলোয় জাহাজের মজুত খাবারে দস্যুরা ভাগ বসালেও এখন তারা নিজেদের খাবার নিজেরাই বাইরে থেকে আনছে। জাহাজে থাকা কয়লার তাপ ও অক্সিজেন লেভেল মনিটরিংসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে যথানিয়মে। মূলত তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা শুরুর পর এবং কোনো ধরনের অভিযান হবে না- এমন নিশ্চিয়তায় জলদস্যুরা কিছুটা নমনীয় হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কবির গ্রুপের মিডিয়া এডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুর দিনগুলোয় নাবিকদের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে দস্যুরা। তবে বর্তমানে নাবিকরা জাহাজে স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছে। তারা এখন পরিবার-পরিজন ও জাহাজ মালিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারছেন। দস্যুদের সঙ্গে দ্রুত সমঝোতা করে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের তৎপরতা চলছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আমরা দস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ঈদের আগেই একটা সুখবর পাওয়া যাবে বলে আশা করি।’ তিনি বলেন, অনেকে মনে করছেন ইইউ নেভাল ফোর্স ও পাল্টল্যান্ড পুলিশের তৎপরতা শুরুর পর থেকে চাপে আছে জলদস্যুরা।
ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভালোই অগ্রগতি হচ্ছে আলোচনা। জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহাজে নাবিকদের খাবার কমলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ তীর থেকে দস্যুরা জাহাজে খাবার নিয়ে আসছে। এছাড়া জাহাজে খাবার ও পানির কোনো সংকট হলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেও খাবার পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, দস্যুরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে। আবদুল্লাহর মালিকের অতীতে জাহান মনিকে মুক্ত করার অভিজ্ঞতা আছে। সেই আলোকে এবারো জিম্মি মুক্তির বিষয়টি অনেক সহজ হবে। জাহান ‘মনি’ মুক্তির ক্ষেত্রে যে সময় লেগেছিল, এবার তার চেয়ে কম সময়ে সমাধান হতে পারে। তিনি আরো বলেন, দস্যুরা এখন নানামুখী চাপে রয়েছে। তারা যা পাবে তাই তাদের লাভ। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করেই নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে আবদুল্লাহর মুক্তি মিলবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টা একদিনে শেষ হবে না। এর জন্য সময় লাগবে। মুক্তিপণ নিয়ে ফয়সালা হবার পর সুরাহা হবে। খাবার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, দস্যুরা নিজেদের স্বার্থেই খাবার নিয়ে আসে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের ওই কয়লাবাহী জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ২৩ নাবিককে জিম্মি করে। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে।