পেনশনের আওতায় আসছেন পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার পরও অবসরের পর কোনো প্রকার সুবিধা পায় না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিক্ষকরা। অন্য দিকে সরকারি শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। ফলে শিক্ষকদের মধ্যেই এই বৈষম্য শিক্ষাদানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বেসরকারি শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি তারাও অবসরের পর পেনশন সুবিধা চান। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকার। তবে সম্প্রতি শিক্ষকদের এই যৌক্তিক দাবির বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ক্রমেই নমনীয় হচ্ছে সরকার। সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ভাতা বা পেনশন সুবিধা চালুর বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
অন্য দিকে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলছেন, বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেয়ার পরেও এখন পেনশনের নামে অতিরিক্ত আরো এক হাজার টাকা কেটে নেয়ার পক্ষে নন তারা। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ মনে করেন, শিক্ষকদের বেতন থেকে টাকা না কেটে বরং সরকারের রাজস্ব ফান্ড থেকে কিংবা অন্য কোনো ফান্ড থেকে পেনশনের এই টাকার সংস্থান করতে হবে। তাহলেই শিক্ষকদের সত্যিকারভাবে দাবি পূরণ হবে। অন্যথায় কৈ এর তেলে কৈ ভাজার মতো অবস্থা সৃষ্টি হবে।
শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া নয়া দিগন্তকে জানান, শিক্ষকদের দাবি হলো তারা অবসরের পর পেনশন পাবেন। কিন্তু এখন যেভাবে একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা দেয়ার কথা চিন্তা করছে এতে শিক্ষকদের কোনো লাভ হবে না। বরং এতে দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে শিক্ষকদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। কেননা পেনশনের অজুহাতে প্রতি মাসে যদি শিক্ষকদের বেতন থেকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা কেটে নেয়া হয় তাহালে প্রকৃত অর্থে শিক্ষকদের তেমন কোনোই সুবিধা হবে না। সরকারের উচিত রাজস্ব ফান্ড থেকে টাকা জোগাড় করে শিক্ষকদের জন্য পেনশন সুবিধার ব্যবস্থা করা।
অবশ্য পেনশন সুবিধার ঘোষণায় এবং সরকারের এমন নমনীয় মনোভাবের কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন দীর্ঘদিনে দাবি অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। কেননা সরকারি কর্মচারীদের মতো পেনশনের আওতায় আসতে যাচ্ছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। অপর দিকে দীর্ঘ দিন পরে হলেও সরকারের এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারলে বর্তমান সরকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। শিক্ষকবান্ধব এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত থেকে যেন সরকার পিছপা না হয় সেজন্য শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
সূত্র মতে সম্প্রতি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে এমন প্রস্তাব তোলা হয়েছে। সভায় এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে সরকারের অতিরিক্ত কত টাকা খরচ হবে তার সারসংক্ষেপ মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করার জন্য একটি কমিটি করে দেয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ওই দিনের সভায় অংশ নেন। সভায় একজন শিক্ষক নেতা সরকারের সর্বজনীন পেনশনের মতোই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও পেনশন চালুর বিষয়ে সভায় প্রস্তাব করার পর শিক্ষামন্ত্রী তাতে সম্মতি জানান। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরাও চাই বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারীর মতো পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন। কিন্তু সরকারের সেই সক্ষমতা আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। একজনকে প্রধান করে এ বিষয়ে তাই একটি কমিটি করে দিচ্ছি। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবে বলা হয়, অবসরের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এককালীন টাকার পাশাপাশি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন। বেসরকারি শিক্ষকরা চাকরিজীবন শেষে অবসরের পুরো টাকা একসাথে পাবেন না। অবসরের সময় অর্ধেক টাকা এককালীন পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্ধেক টাকা তাদের পেনশন আকারে দেয়া হবে। পেনশনের টাকা শিক্ষকরা আজীবন পাবেন। কোনো শিক্ষক মারা গেলে তার মনোনীত ব্যক্তিকে (নমিনি) পেনশনের টাকা দেয়া হবে।