খুলনায় লবণাক্ত জমিতে বছরজুড়েই ফলছে ফসল

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অভিশাপ ছিল মাটির অতিরিক্ত লবণাক্ততা। মিঠাপানির অভাবে বছরের অধিকাংশ সময় পতিত থাকত ফসলি জমি। লোনাপানি আটকে চিংড়ি চাষের কারণে একসময় শুধু বর্ষা মৌসুমেই আমন ধান উৎপাদন হতো। সেই লবণাক্ত মাটি থেকে এখন বছরজুড়ে ফসল ঘরে তুলছেন উপকূলীয় এ অঞ্চলের কৃষক।

কৃষক বলছেন, পরপর কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর শুধু ধান চাষ করে তেমন লাভবান হতো না। লবণসহিষ্ণু ফসল আবাদের পদ্ধতি শিখে নিয়েছেন তারা। মৌসুমভেদে তরমুজ, শিম, কিনোয়া, সূর্যমুখী, সরিষা, বেগুন, করলা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গোল আলু, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন তারা। পাশাপাশি বিনাচাষে রসুন ও ভুট্টাও উৎপাদন করছেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় চার উপজেলা দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও পাইকগাছায় লবণাক্ততা বেড়েছে। বছরের পর বছর কৃষি জমিতে লোনাপানি আটকে চিংড়ি চাষ করতেন এখানকার কৃষক। শুধু বর্ষা মৌসুমে আমন ধান উৎপাদন হতো। বাকি সময় এসব জমি পতিত থাকত। শুষ্ক মৌসুমে উপকূলের মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। চার বছর আগেও জমিগুলো আমন ধান চাষের পর অনাবাদি পড়ে থাকত। এখন সেই জমিগুলোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপকূলের কয়েক উপজেলার চাষীদের। অল্প সময়ে বিনিয়োগে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভ হওয়ায় কৃষক ঝুঁকছেন তরমুজ চাষে। উপকূলীয় এলাকার তরমুজ মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে সারা দেশে। লাভ বেশি হওয়ায় চাষও বাড়ছে। গত কয়েক বছর এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে নতুনমাত্রা যোগ করেছে তরমুজ।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও পাইকগাছায় এবার ১২ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ টন। যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

খুলনার দক্ষিণে সুন্দরবনঘেরা উপজেলা কয়রা। এ জনপদের চারদিকে পানি থাকলেও তা লবণাক্ত। পুকুর, খাল, নদ-নদীতেও লবণ পানি। গভীর বা অগভীর নলকূপ এখানে অকার্যকর। সেচ সংকটে কৃষক ফসল আবাদ করতে পারতেন না।

কয়রার নাকশা গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের, হারুন গাজী, আবদুল আজিজ, যোগেশ মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন জানান, উপকূলীয় কৃষকের জন্য মাটির অতিরিক্ত লবণাক্ততা ছিল অভিশাপ। চোখের সামনে বিস্তীর্ণ জমি থাকলেও চাষের জমির জন্য ছিল হাহাকার। লবণাক্ত মাটি থেকেই এখন ফসল ঘরে তুলছেন তারা। কৃষিকাজ করে তারা এখন স্বাবলম্বী। এসব ফসল বিক্রি করে তাদের আয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ।

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এ উপজেলায় বিগত দিনের তুলনায় ফসল ও সবজি চাষ বেড়েছে। কৃষকদের ফসল ও সবজি চাষে প্রদর্শনী এবং প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে ধানের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে তরমুজ। ২০২০ সালে এ উপজেলায় মাত্র ৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। চাষীরা লাভবান হওয়ায় চার বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬০ টন।’

তরমুজ চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পুরোদমে তরমুজ তোলা ও বিক্রির কাজ চলছে। পাকিজা, সুইট ড্রাগন, মারভেলাস, আনারকলিসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন তারা। ফলনও ভালো হয়েছে, দামও পাচ্ছেন ভালো। বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) তাদের খরচ হয়েছে ১৮-২২ হাজার টাকা। আর আয় হচ্ছে ৬০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে তরমুজের বীজ, কীটনাশক, সার ও ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে লাভ কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনা কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারুনর রশীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ধান, ডাল, তরমুজ, আলু, ভুট্টা, বার্লি, সূর্যমুখী ও সবজিসহ কয়েকটি ফসলের লবণসহিষ্ণু উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে পেরেছি। উপকূলীয় জমিতে এসব ফসল উৎপাদন বেড়েছে। তবে ধানের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে তরমুজ।’

দাকোপ উপজেলায় এ বছর ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি তরমুজের গড় উৎপাদন হয়েছে ৪২ টন। ১ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত তরমুজ ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.