অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের দৃষ্টিনন্দন দোতলা বাড়ি

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজমিস্ত্রী ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে দোতলা একটি বাড়ি। রয়েছে বাড়িটিতে ঢোকার গেট, সিড়ি, প্রতি তলায় বেলকনি। সাদা, লাল ও নীল রঙে রঙিনও করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘তাওহীদ খন্দকার’, আর ঠিকানা ‘ত্রিমোহন’। দোতলা ওই বাড়িটি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র।

জমানো টাকা খরচ করে এবং বাড়ির পাশের পল্লী বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাজ চলাকালীন সেখান থেকে অল্প অল্প করে কুড়িয়ে নিয়ে আসা সিমেন্ট-বালির মিশ্রণ দিয়ে দোতলা বাড়ির অবয়ব বানিয়েছে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ত্রিমোহন গ্রামের মো. ফরহাদ খন্দকার ও মোছা. তারা খাতুন দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান মো. তাওহীদ খন্দকার। সে বর্তমানে একদন্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

স্বাভাবিক বিল্ডিংয়ের মতোই শক্ত ও মজবুত ওই স্থাপত্যে চড়তে পারে যেকোন ওজনের বাচ্চারা। প্রায় দুই বছর আগে তৈরিকৃত এ দোতলা বাড়ির সামনে তৈরি করা হয়েছে ক্যানাল টাইপ রাস্তাও।
বাড়িটি তৈরিতে সাহায্য করেছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মিরাজ আফ্রিদি, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক সহ স্থানীয় অনেকেই। সম্প্রতি দোতলা ভবনটি রঙ করে দিয়েছেন স্থানীয় রং মিস্ত্রি আব্দুল্লাহ। এরপরেই সকলের নজরে আসে ছোট্ট ভবনটি।

ছেলের এমন কাজে খুশি তার বাবা ও এলাকাবাসী। তাওহীদের বাবা বলেন, আমার ছেলে একদন্ত’র ডেঙ্গারগ্রাম ডিগ্রি কলেজ দেখে এসে ওই নকশাতেই তৈরি করার চেষ্টা করেছে। অনেক ইঞ্জিনিয়ার এসে দেখে গেছে। তারা সবাই এটা দেখে আশ্চর্য হয়েছেন। সবাই এসে দেখে খু্ব খুশি হচ্ছেন। আর ভালো করে লেখাপড়া করাতে বলেছেন।

দোতলা ওই বাড়িটির নির্মাতা তাওহীদ খন্দকার জানায়, স্কুলে গিয়ে কলেজ দেখে এসে ওইরকম করে বাড়ি তৈরির ইচ্ছা জাগে এবং বাড়ির আঙিনায় অল্প অল্প করে এরকম একটি বিল্ডিং তৈরি করেন সে।

বিষয়টি জানাজানির পর থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ছোট্ট দোতলা বাড়িটি দেখতে আসেন। পাবনা সদর উপজেলা থেকে দেখতে যাওয়া মো. রেদোয়ান সিদ্দিক নামের এক দর্শনার্থী বলেন, এরকম একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি দেখে মনের কাছে ভালোই লেগেছে। এত কম বয়সে এরকম বাড়ি নির্মাণ করা আসলেই চিন্তাতিত বিষয়। যা ছোট বাচ্চাদের পক্ষে একদমই অসম্ভব কাজ। কিন্তু এই ছেলে তা ভুল প্রমাণ করেছে।

স্থানীয় ইউ.পি. সদস্য ফরহাদ শিকদার বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। এরকম একটি কাজ করা যে কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে আমরা ওর পাশে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

তাওহীদের বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মকবুল হোসেন বলেন, তাওহীদ আমাদের বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। সে এত অল্প বয়সে তীক্ষ্ণ মেধা দ্বারা নিজস্ব অর্থায়নে এই বিল্ডিংটি তৈরি করছে। সে যদি সরকারী বা কোন সংস্থা থেকে সাহায্য সহযোগিতা পায় তাহলে হয়তো দেশকে বড় একটা কিছু উপহার দিতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

কর্মহীন তাওহীদের বাবা তার দুই মেয়েকেও পড়াশোনা করাচ্ছেন। বড় মেয়ে এডওয়ার্ড সরকারি কলেজে মাস্টার্স ও ছোট মেয়ে শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত।
অভাবের সংসার হলেও ভবিষ্যতে ছেলেকে বড় ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করেন তাওহীদের বাবা মা। এজন্য সকলের নিকট দুয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.