সারা দেশে অভিযানের নির্দেশ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মেসি থেকে নিষিদ্ধ অ্যানেসথেসিয়ার হ্যালোথেন গ্রুপের ওষুধ ‘হ্যালোসিন’ উদ্ধার করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতকাল এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে দুপুরে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ব্যাপারী ফার্মেসিতে অভিযান চালান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে নকল হ্যালোথেন বিক্রির সঙ্গে জড়িত একজনকে আটক করা হয়। তার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মিটফোর্ড এলাকায় এবং আজিজ সুপার মার্কেটের একটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ এই ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সভা করে সংকট উত্তরণে একটা পরিপত্র জারি করেছি। এই হ্যালোথেন ব্যবহার করা যাবে না। এটা একদম নিষিদ্ধ। তারপরও এটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যে বিক্রি করছে, সে যেমন দোষী, তেমনি যে চিকিৎসক এটি ব্যবহার করছেন, তিনিও দোষী।’ এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি ব্যবহারে যাকে যেখানে পাব, যেই হাসপাতালে পাব, যেই চিকিৎসককে পাব, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যেই ওষুধ নিষিদ্ধ, সেটি ব্যবহার করার এখতিয়ার কোনো চিকিৎসকের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার তদন্তে পাওয়া গেছে এই অ্যানেসথেসিয়া ড্রাগের জন্য এমনটি হয়েছে। সুতরাং এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না যে একটি শিশু বা কারও জীবন এভাবে চলে যাবে। আমি ডিজি ড্রাগকে নির্দেশ দিয়েছি সারা দেশে অভিযান চালানোর জন্য।’ সভায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে হ্যালোথেন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এসিআই একমাত্র অনুমোদিত কোম্পানি ছিল, যারা এটি তৈরি করত। একটি ওষুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক বছর পরও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যখনই দু-তিনটা দুর্ঘটনা ঘটার পর আমাদের সন্দেহ হলো, আমরা বাজার থেকে স্যাম্পল নিয়ে টেস্ট করলাম। টেস্টে দেখা গেল এই ওষুধে ভেজাল আছে। যেহেতু ভেজাল পাওয়া গেছে, সঙ্গে সঙ্গে অল্টারনেটিভ ভালো ওষুধ ব্যবহার করার জন্য সবাইকে বলেছি।’
উল্লেখ্য, অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে অজ্ঞান করতে ‘হ্যালোথেন’ নামের একটি এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি অ্যানেসথেসিয়ার কারণে কয়েকজন রোগীর মৃত্যু ঘটলে এই নকল ওষুধ ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসে। তখনই এটি নিষিদ্ধ করা হয়।
গত ২৭ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা জারি করে জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের অস্ত্রোপচারকালে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার সময় বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এবার রোগীর মৃত্যু ও আকস্মিক জটিলতা প্রতিরোধ এবং অ্যানেসথেসিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধের মান নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অ্যানেসথেসিয়ার কারণে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহারে ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ শীর্ষক এই চিঠিতে বলা হয়, অ্যানেসথেসিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য হ্যালোথেন ব্যবহার ও এর বিকল্প নির্ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার ঘটনায় মৃত্যু ও এর অপপ্রয়োগ প্রতিরোধ করতে সুপারিশ করা হলো।
সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষে ইনহেলেশনাল অ্যানেসথেটিক হিসেবে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন অথবা সেভোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের সব হাসপাতালে বিদ্যমান হ্যালোথেন ভেপোরাইজার পরিবর্তন করে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ও ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রাক্কলন করতে হবে। অর্থাৎ এ বিষয়ে খরচের পরিমাণ জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া হ্যালোথেন বেচাকেনা ও ব্যবহার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রণালয় জানায়, সারা দেশের সব অবেদনবিদকে (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে হ্যালোথেন ভেপোরাইজারের বদলে আইসোফ্লুরেন ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপনের জন্য চাহিদা মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নতুন অ্যানেসথেসিয়া মেশিন কেনার বেলায় স্পেসিফিকেশন নির্ধারণে স্পষ্টভাবে ভেপোরাইজারের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনাটি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়।