উদযাপিত হলো ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউস রুশ-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারের ৫০ বছর পূর্তি
নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেন; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ ফেডারেশনের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রসোত্রুদনিচেভোর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিমাকভের পক্ষ থেকে ঢাকায় রাশিয়ান হাউসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন জানানো হয়। তিনি বলেন, অর্ধশতাব্দী একটি পুরো যুগ, যে সময়ে রাশিয়ান হাউস বাংলাদেশে রুশ ভাষা ও সংস্কৃতির সত্যিকার অর্থে কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যা আমাদের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।
স্বাগত বক্তব্যে রাশিয়ান হাউসের পরিচালক পাভেল দ্ভইচেনকভ বলেন, ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউস (পূর্বে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দৃঢ় কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক। গত পাঁচ দশক ধরে, এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি, শিক্ষাগত বিনিময় প্রচার এবং সমঝোতামূলক সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-রাশিয়া বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি বিশেষ করে শিক্ষা, শিল্প ও সাহিত্য ক্ষেত্রে স্থায়ী ঐতিহাসিক বন্ধনের সাক্ষ্য। এই মাইলফলক উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য এক অবিচল অঙ্গীকারের প্রতীক।
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ান ফেডারেশনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন বলেন, ‘ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের ৫০ বছর পূর্তি রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও বন্ধুত্বের অর্ধ শতাব্দী পূর্তি। রাশিয়ান হাউস রাশিয়ান সংস্কৃতি প্রচার এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। রাশিয়া বাংলাদেশের প্রতি তার ঐতিহাসিক সমর্থনকে মূল্যায়ন করে এবং সময়ের সাথে সাথে আমাদের বন্ধন আরও জোরদার হয়েছে। আজ আমরা সাংস্কৃতিক এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ককে গভীরতর করার জন্য আমাদের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছি। রাশিয়ান হাউস এই বন্ধুত্বের একটি স্তম্ভ হিসাবে রয়ে গেছে, সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মাধ্যমে আমাদের জনগণকে একত্রিত করেছে”.
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শিল্প ও সাহিত্যের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অধিকারী বিশ্বের অন্যতম বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে রাশিয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সাংস্কৃতিক বিনিময় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া জোরদার করতে সহায়তা করবে।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশে রুশ দূতাবাস, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং নৃত্যদল ‘হ্যাপিনেস’-এর সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি উৎসবমুখর কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে “ভালেনকি”, “গুসাচোক”, “কাতিউশা”, “লেবেদুশকা”, “গোরি, গোরি ইয়াসনো”, “ভি রোশে পেল সোলোভুশকা”, “পোরুশকা-পারানিয়া” এবং “নাদ ভোদোয়” এর মতো রুশ লোক নৃত্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রথমবারের মতো বেশ কিছু রুশ নৃত্য পরিবেশন করে দর্শ কদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশের সোভিয়েত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ-রাশিয়া ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বদেশী সহ বাংলাদেশস্থ রুশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন এবং ৩০ টিরও বেশি স্থানীয় মিডিয়া প্রতিনিধি অনুষ্ঠানের প্রচার সহযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন।