বিএনএনআরসির উদ্যোগে ময়মনসিংহে সিএসওদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা ডিজিটাল উন্নয়ন ও প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রশমন ও করণীয়: সিএসওদের দক্ষতা উন্নয়ন

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল ডিজিটাল উন্নয়ন ও প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রশমন, করণীয় সম্পর্কে স্থানীয় সিএসওদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ, ও নাসিমা খাতুন, প্রোগ্রাম অফিসার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ|

কর্মশালায় ময়মনসিংহ জেলার ৩৫জন সিএসও ও এনজিও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার মাধ্যমে তাঁরা ডিজিটাল উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রশমনে নিজি নিজ সংগঠনের মাধ্যমে ভূমিকা রেখে সমাজকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, এবং TFGBV মোকাবিলার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল উন্নয়নকে এগিয়ে নেবেন।
কর্মশালার উদ্দেশ্য হল প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা- এর প্রেক্ষিত ধরন, প্রভাব এবং প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট, আইন ও নীতিমালা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল উন্নয়নের সম্ভাবনা সম্পর্কে গণমাধ্যম পেশাজীবীদের সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা, গণমাধ্যম পেশাজীবীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সহকর্মীদের মধ্যে টিএফজিবিভি প্রতিরোধ সম্পর্কিত জ্ঞান এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে সচেষ্ট করা, ডিজিটাল উন্নয়ন ও টিএফজিবিভি প্রতিরোধ, প্রশমন ও করণীয় চিহ্নিত করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হওয়া। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও নেটওয়ার্ক গঠনের মাধ্যমে অব্যাহত সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং টিএফজিবিভি-সম্পর্কিত বিষয়সমূহ চিহ্নিত করে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে টিএফজিবিভি প্রতিরোধ ও প্রশমনে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের ভ‚মিকা ও করণীয় নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করা ।
কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাধীন চৌধুরী, জেলা ফোকাল পারসন বিএনএনআরসি এবং নির্বাহী পরিচালক, নিষ্ঠা উন্নয়ন সংঘ। তিনি কর্মশালার উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের অবহিত করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি ময়মনসিংহ জেলা তথা সহিংসতার ব্যাপকতা ও আইনি প্রতিক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা, তথ্য ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, আদালত, পুলিশ ও এনজিওর মধ্যে সমন্বিত ডিজিটাল কেস-রেজিস্ট্রি না থাকা এবং নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।
বিএনএনআরসি বাস্তবায়ন করছে ‘স্ট্রেনদেনিং রেজিলিয়েন্স এগেইনস্ট টেকনোলজি ফেসিলিটেটেড জেন্ডার বেইসড ভায়োলেন্স (টিএফজিবিভি) এন্ড প্রমোটিং ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পটি। প্রকল্পটি নাগরিকতা: সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ড (CEF) কর্মসূচির অংশ। এটি বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা করছে জিএফএ কনসালটিং গ্রæপ এবং অর্থায়ন করছে সুইজারল্যান্ড ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ।

বিএনএনআরসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান প্রযুক্তির সহায়তায় জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা (TFGBV): ধারণা, ধরন, নেতিবাচক প্রভাব, ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট ও এর ধারণা, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি কর্মশালার উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের অবহিত করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় স্থানীয় গণমাধ্যম পেশাজীবীদের মাঝে ডিজিটাল ডেভলপমেন্ট ও প্রযুক্তির সহায়তায় জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের করণীয় এবং সংবাদ প্রচারের জন্য তথ্য সংগ্রহের নতুন নতুন ক্ষেত্র ও অংশীজন নির্বাচনের ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। পাশাপাশি তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিরোধের জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে বিষয়টি সম্পর্কে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে TFGBV-র ধরণ, প্রতিরোধ, প্রশমন ও করণীয় সম্পর্কে নিজেদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়াও সিএসও প্রতিনিধিগণ TFGBV প্রতিরোধে নতুন স্টেকহোল্ডারগণ যেমন; আইএসপি, বিভিন্ন কেবল নেটওয়ার্ক প্রতিনিধি, বিকাশ, রকেট এর বিভিন্ন এজেন্টদের বিষয়টি জানানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাসিমা খাতুন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ। তিনি নারী ও ছাত্রীদের জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা এবং টিএফজিবিভির প্রাথমিক শিকার হিসেবে তাদের দুর্বল বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি স্বীকার করেন যে পুরুষরাও টিএফজিবিভিতে আক্রান্ত হতে পারে, এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য নীতিনির্ধারক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং কমিউনিটির সদস্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উপর জোর দেন। তিনি প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতামূলক এবং ব্যাপক প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ, তিনি বলেন, টিএফজিবিভি প্রতিরোধে সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজন। তিনি একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তালার জন্য পরিবারের সদস্য, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। তিনি জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার নতুন রূপের জটিলতা এবং উত্থানকে স্বীকৃতি দিয়ে কমিউনিটির সদস্য এবং প্রশাসনের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দেন। টিএফজিবিভি কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সকলের নিজ নিজ ক্ষমতায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরিবারে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা খুব জরুরি। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, এই উদ্যোগ নাগরিক সমাজ এবং সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে বর্ধিত সমন্বয় গড়ে তুলবে, যা নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলির মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব এবং নেটওয়ার্কিংয়ের পথ প্রশস্ত করবে। এই আলোচনা একটি নিরাপদ এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল ক্ষেত্র তৈরি করবে, বিশেষ করে ময়মসিংহ বিভাগের যুব, যুব নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এবং ভূমিকা রাখবে টিএফজিবিভি মোকাবেলায়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.