টিআর ও কাবিখায় বড় ধরনের বরাদ্দ আসছে
নিজস্ব প্রতিনিধি : টিআর ও কাবিখা কর্মসূচি প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কাজ আর নয়। এখন থেকে শতভাগই গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) বড় ধরনের বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক জেলায় এ প্রকল্পের বাতিগুলো আর জ্বলে না।
এদিকে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প বিতরণে সরকার দলীয় এমপি ও মন্ত্রী এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনায় সরকার এ প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পের মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর থাকবে। সংশ্লিষ্ট পিও বিনামূল্য সোলার প্রকল্পে সার্ভিস প্রদান করবেন। ৩ বছর মেয়াদ উত্তীর্ণের পর প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে জামানতের টাকা পাবে। আর যথাযথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হলে প্রকল্পের জামানত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে। গতকাল শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন ইনকিলাবকে বলেন, আপাত আমরা সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পে যাচ্ছি না। এর বিপরীতে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) বরাদ্দ ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। এটি মুজিবর্বষের উপলক্ষে গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের একটি বড় উদ্যোগ। সরকার চাইলে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প আবারো চালু করা হবে।
সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প বাতিল করে সকল প্রকল্পে টিআর ও কাবিখার বাস্তবায়নের দাবিতে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে চিঠি দিয়েছিল। একাধিক সরকারদলীয় এমপি ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা। অবশেষে তাদের দাবিতে এবার টিআর ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্পের ৫০শতাংশ অর্থ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কাজ বাতিল করল সরকার। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার।
টিআর কাবিখায় বরাদ্দকৃত অর্ধেক অর্থ সোলার প্যানেল ও ব্যায়োগ্যাস স্থাপনের কাজে ব্যয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাকি টাকায় হবে অবকাঠামো উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে প্রকল্প বন্ধ থাকার পরও নির্দেশিকা জারি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের গত ৫ জানুয়ারি যুগ্মসচিব মো. ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিক একটি চিঠি সকল জেলা প্রশাসকদের দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, টিআর ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কাজে ইটকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হচ্ছে। চলমান কার্যক্রমে মূল্য পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ইটকলের সাথে আলোচনা করে আগের চেয়ে বর্তমান প্রকল্পের মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে নির্দেশিকা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার যৌথ স্বাক্ষরে সংরক্ষিত থাকবে।
বিনামূল্যে স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিস প্রদান করবে। ৩ বছর মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হয়েছে প্রতীয়মান হলে জামানতের সম্পূর্ণ টাকা প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে দেয়া হবে। প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে সেবা সন্তোষজন বিবেচিত না হলে জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক-এর প্রতিস্বাক্ষরে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম কিস্তিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর অনুমোদিত প্রকল্পে টিআর নন সোলার খাতে রাঙ্গামাটি সদরে ১৩ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা, লংগদুতে ২১ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, কাউখালীর ১০ প্রকল্পে ১৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা, বরকলে ২৩ প্রকল্পে প্রায় ২১ লাখ টাকা, বাঘাইছড়ির ৩০ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকা, জুরাছড়ির ১৫ প্রকল্পে প্রায় ১৬ লাখ টাকা, নানিয়ারচরের ৯ প্রকল্পে ১৪ লাখ টাকা, কাপ্তাইয়ের ১১ প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা, বিলাইছড়িতে ২৩ প্রকল্পে ২৩ লাখ টাকা এবং রাজস্থলীর ৬ প্রকল্পে সাড়ে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় এসব প্রকল্পের কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক তদন্ত করা হয়েছে। সেখানে সত্যতা পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে প্রকল্পের ৬ মাসের মধ্যে অনেক এলাকা প্রকল্পে বাতি জ্বলে না। আর সংস্কার বা সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে না বলে দেশের বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
ওই সময়ের সরকারদলীয় এমপি ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: আফছারুল আমীনের অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণ এলাকার রাস্তা ঘাট উন্নয়নের প্রকল্প- কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) সোলার খাতে স্থানান্তর করে আবারও লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে সরকার আবারও এ খাতে বরাদ্দ দিয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। এর পেছনের রহস্য পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে অভিমত তাদের।
গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দের অর্থ থেকে নয়। এ জন্য পৃথক প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উল্লিখিত দুই অর্থবছরে সোলারের বরাদ্দের ৩৩১ কোটি টাকার অধিকাংশই গচ্চা যেতে পারে বলে আশংকা এমপিদের। এর পর গত ৪ জানুয়ারি প্রতিটি জেলায় দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।