সবার টিকা গ্রহণ নিশ্চিতে সহযোগিতা করুন : আনসার-ভিডিপির প্রতি প্রধানমন্ত্রী
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বৈশ্বিক করোনা মহামারি থেকে বাংলাদেশের সব মানুষ যাতে সুরক্ষিত থাকে সে জন্য গ্রামের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের সব মানুষের করোনাভাইরাস-প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে আনসার সদস্যদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪১তম জাতীয় সমাবেশে বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আনসার-ভিডিপির প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি মানুষ যেন এই করোনার টিকাটা নেয়। কারণ টিকা দেওয়া আমরা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি। অনেকেই ভয় পান, সুই ফোঁটাতেই ভয় পান। এ রকমও কিছু মানুষ আছে। কিন্তু তারা যাতে রোগাক্রান্ত না হয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার পাশাপাশি টিকাটাও তারা নেয়, সময়মতো সে ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। আমরা আপনাদের সহযোগিতাও চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধনের জন্য আমাদের যে ডিজিটাল সেন্টার আছে,
সেই সেন্টারে গিয়েই সবাই নিবন্ধন করতে পারবেন। তার মাধ্যমে নিজে এবং পরিবারের সব সদস্যও যেন টিকা নেয় সেদিকে যত্নবান হওয়ার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আনসার-ভিডিপিকেও আমি অনুরোধ করছি, আপনারাও গ্রামের মানুষকে একটু উদ্বুদ্ধ করবেন, যেন এই মহামারি, যেটা আজকে বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে, তার হাত থেকে অন্তত বাংলাদেশের মানুষ যেন মুক্তি পায়, সে জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ছেলেমেয়েরা যেন বিপথে না যায় : সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে আনসার সদস্যদের ভ‚মিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে ভবিষ্যতেও তৎপরতা অব্যাহত রাখতে তাদের আহ্বান জানান। বলেন, বাল্যবিয়ে রোধ করা, মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, আমাদের দেশের যুবসমাজ যেন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ ভ‚মিকা আপনারা রেখে যাচ্ছেন এবং আরও এটা রাখা প্রয়োজন। এর জন্য বিভিন্ন তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন থেকে শুরু করে অন্য কাজগুলো আপনাদের করতে হবে, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বিপথে না যায়।
এ সময় আনসার বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচি তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম, আনসার-ভিডিপি যে মানুষকে সেবা দেয়, তাতে যে পদক দেওয়া বা সম্মান দেওয়া, এটা আমরাই প্রথম চালু করি। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ সেবা ও সাহসিকতা পদক আমরা প্রবর্তন করি।
আনসার সদস্যরা পেল নতুন পোশাক : অনুষ্ঠানে আনসার সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক প্রবর্তন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পোশাক তিনি নিজেই পছন্দ করেছেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক বাহিনীর নিজস্ব পোশাক আছে। কাজেই আমরা পাকিস্তান আমলের সেই খাকি পোশাক বাদ দিয়ে এখন নতুন ড্রেস ও কমব্যাট পোশাক প্রদান করেছি। এই রঙ এবং ডিজাইনটা আমি নিজেই পছন্দ করে দিয়েছি, আশা করি আপনাদের সবার পছন্দ হয়েছে।
নারী সদস্যদের পোশাকেও পরিবর্তন আনা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, ছেলেদের যেহেতু কমব্যাট পোশাক, তাই মেয়েদের জন্যও একটু নতুন কিছু চিন্তা করতে হবে। হয়তো নতুন ডিজাইনে কিছু শাড়ি আমরা করে দেব। আর্থিক অসচ্ছল সদস্যের জন্য বাড়ি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, দেশের প্রতিটি রেঞ্জে আর্থিকভাবে অসচ্ছল একজন করে আনসার সদস্যকে বাড়ি করে দেবে সরকার। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু সরকারের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবিচল বিবেচনায় দেশের প্রতিটি রেঞ্জে একজন করে ভিডিপি সদস্যকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রত্যেক এলাকায় আমরা এভাবে বাড়ি তৈরি করে দেব।
এ ছাড়া আনসার ও ভিডিপির প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা খোঁজার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিই। এই প্রশিক্ষণের জন্য একটা ভালো জায়গা খুঁজতে আমি ইতোমধ্যে মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছি, যাতে করে সেখানে ভালোভাবে একটা প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। এই বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো কাজে মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছিল, রেলের ওপরে আগুন দেওয়া অথবা রেললাইন সরিয়ে ফেলে দিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করার মতো অমানবিক কাজে এই বিএনপি-জামায়াত জোট সম্পৃক্ত ছিল। সেই সময় সারা দেশে মানুষের জান-মাল রক্ষায় আনসার বাহিনীকে আমরা সম্পৃক্ত করেছিলাম এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই সময় এই অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করেছে। সে জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রীর আফসোস : করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছর আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ একাডেমি গাজীপুরের সফিপুরে গিয়ে কেনাকাটা করতে না পারায় আফসোস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, সারা দেশের এই একটা জায়গায় গেলেই আমি কিছু কিনতে পারি, সেটা হচ্ছে সফিপুরের এই জায়গাটা। আমার দুঃখ থাকল, আমি এখানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। আর এই একটি জায়গা, যেখানে আমি প্রতিবার যাই। আনসার-ভিডিপির কালচারাল অনুষ্ঠান যেটা হয়, সেটা উপভোগ করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সব মানুষ যে আসে তারা বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। আমি সেখানে একটু কেনাকাটাও করি, বাজারও করি। কিন্তু করোনার কারণে যাওয়া হলো না। গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি প্রান্তে এই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।