ধুঁকে ধুঁকে চলছে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: আবহাওয়ার আগাম খবর জানাতেই স্থাপন করা হয়েছিল ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। প্রতিষ্ঠার পর পেরিয়ে গেছে ৫৫টি বছর। এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে। নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তিও। কোনোরকমে ধুঁকে ধুঁকে চলছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি।
১৯৬৫ সালে স্থাপন করা হয় এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। দেশ এখন মহাকাশ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রটি যুগোপযোগী ও আধুনিকীকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভৌগলিক অবস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিবেচনায় ১৯৬৫ সালে স্থাপন করা হয় ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। এখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন, পশ্চিম রেলের বিভাগীয় দপ্তর, বিমানবন্দর, ইপিজেডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত।
প্রতিষ্ঠাকালে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাসহ ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির পদ মঞ্জুর করা হয়। কিন্ত মাত্র ১০ জন লোকবল এবং পুরোনো ও প্রায় অকার্যকর যন্ত্রপাতি নিয়ে দায়সারাভাবে চলছে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি। দুই বছর আগে একটি অটোমেটিক আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করা হয়। তবে তা একদিনের জন্যও চালু করা যায়নি। এ অবস্থায় এখান থেকে আপডেট ফোরকাস্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের টেলিপ্রিন্টার সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখানে একটি আধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। এটির নাম এওয়াজ। যা অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন হিসেবে পরিচিত। দুই বছর আগে অটোমেটিক মেশিনটি স্থাপন করা হলেও শুরু থেকেই বিকল হয়ে আছে। ফলে আপডেট কোনো খবর আমরা দিতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রটি স্থাপনের পর যে মেশিনগুলো বসানো হয়েছিল, সেগুলোও অকেজো হয়ে গেছে। ভবনগুলোর মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। যেসব জনবল চাকরি শেষ করেছেন, সেই পদে আর নতুন করে কোনো লোক নিয়োগ হয়নি। ফলে আমরা জরাজীর্ণ ভবন, লোকবল সংকট আর অকেজো যন্ত্রপাতি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি।’
এদিকে, অবিলম্বে ঈশ্বরদী পর্যবেক্ষণাগারটিকে আধুনিক ও পুর্ণাঙ্গ আবহাওয়া অফিসে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন সুশিল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা। ঈশ্বরদীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংবাদকর্মী খন্দকার মাহবুবুল হক দুদু বলেন, ‘ঈশ্বরদী বর্তমানে অতি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। দেশের সর্ববৃহৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ে জংশন, সদর দপ্তর, ইপিজেড, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অধিকারী এলাকায় আবহাওয়া অফিসটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকাটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এটি গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটি প্রত্যাশা করি।’
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, ‘আবহাওয়া অফিসটিতে অনেক দৈন্যতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশটিকে যেভাবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই আবহাওয়া অফিসটি দ্রুত আধুনিকায়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে দ্রুত ও সঠিক প্রাকৃতিক খবর জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করি।