যে কোন মূল্যে পাবনার ইছামতি নদীর অবৈধ দখল মুক্ত করে নাব্যতা ফেরানো হবে – আরিচা-কাজীরহাট ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
পাবনা প্রতিনিধি : নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যে কোন মূল্যে পাবনার ঐতিহাসিক ইছামতি নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পর ড্রেজিং করে নাব্যতা ফেরানো হবে। অবৈধ দখলদার যত বড় ক্ষমতাধর হোক, কোন প্রভাব বিস্তার করে লাভ হবে না। তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোন দেশ নদী উদ্ধার ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনী ইস্তেহার দেয়নি। যা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইস্তেহারে দিয়েছিলেন।
পাবনার কাজিরহাট-আরিচা ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার দুপুরে বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার কাজিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিআইডব্লিউটিএ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ইতোমধ্যে ১০ হাজার কিমি নৌ পথ তৈরী করা, নৌপথগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিগত বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় আসলেও কোন ড্রেজার ক্রয় করেনি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৮০ টি ড্রেজার ক্রয় করেছে। তিনি বলেন, নৌপথ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে বর্তমান সরকার ৪ টি মেরিন একাডেমী তৈরী করেছে। যা দেশ স্বাধীনের কোন সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্র জয় আমাদের নেত্রীর অবদান। তার কারনে আমরা আজ সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৯৮ সালে আরিচা-কাজিরহাট নোরুটটি বন্ধ হয়। আজকে ২৪ বছর পর এটি নতুন করে চালু ব্যবস্থা হওয়ার নিজের কাছে গর্বের মনে হচ্ছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ৩০ বছর আগেই স্বাধীনতার সুখ পেত জনগন। কিন্তু তাকে হত্যা করায় এই সুখ পাচ্ছেন ৫০ বছর পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমলে।
তিনি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয় এমপির উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের উল্লেখযোগ্য ১৭ জেলার মধ্যে পাবনা একটি জেলা। এই পাবনায় ক্রিকেটের উন্নয়নে নজর দেয়ার আহবান জানান।
একই সাথে ঈশ্বরদী পাবনা ঢালারচর রেললাইন অচিরেই বঙ্গবন্ধু সেতুর সাথে সংযুক্ত নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও নৌপথগুলো সচল করতে বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে দাবী করেন প্রতিমন্ত্রী।
বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ ফিরোজ কবির, মানিকগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয়, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, পাবনা -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ ও পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান।
অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন, বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম, সুজানগর পৌরমেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব, বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল সাহা, মাসুমদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরোজ হোসেন, রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খন্দকার আহমেদ শরীফ ডাবলু প্রমুখ।
এ দিন দুপুর বারোটায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরিচা ঘাট থেকে নৌপথে কাজিরহাট ঘাটে আধুনিক ও উন্নতমানের নতুন সংযোজন বেগম রোকেয়া রো-রো ফেরিযোগে আসেন। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান। জনসভা শেষে কাজীরহাট ফেরিঘাটে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধনী নামফলক আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মোচন করার কথা থাকলেও,নামফলক উম্মোচন না করেন করেন নাই। জনসভা শেষে নির্মানাধীন পাবনা মেরিন একাডেমী পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভা করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এদিকে টানা ২৪ বছর পর পাবনার কাজিরহাট টু আরিচা নৌ রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
কাজিরহাট ঘাটের নৌ পরিবহনে মালামাল লোড আনলোডের শ্রমিক আব্দুল মতীন বলেন, ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় আমরা এক ধরনের বেকার হয়ে পড়েছিলাম। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার নতুন করে আশার আলো দেখছি।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ আব্দুল জব্বার বলেন, এই জীবনে বেশ কয়েকবার ফেরি চলাচল ও বন্ধ দেখেছি। আবার নতুন করে চালু হওয়ার আর্থসামাজিক নানা উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পারছি।
বেগম রোকেয়া ফেরিতে আসা আব্দুল বাসেদ, রফিকুল ইসলাম, মোমেন আলী, শাহেদ আলীসহ বেশ কয়েকজনের বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানাই এতো সহজে রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গের এই যোগাযোগ কেন বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দেবেন।
স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু বলেন, দীর্ঘকাল ২৪ বছর পর নতুন করে পাবনাবাসীর যোগাযোগে নতুন ও স্বল্পসময়ে পারাপারের ব্যবস্থা হওয়ায় অনেক পথ ও সময় কমে আসলো। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জের দাবী জানান সরকার প্রধানের কাছে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা তাদের বক্তব্যে দাবী জানান, নৌপথ চালু রাখার পাশাপাশি আরিচা কাজিরহাট যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি সেতু নির্মানের দাবী এবং এই ঘাট কেন্দ্রীক আমিনপুর থানাকে উপজেলা রুপান্তর করার জোর দাবী জানানো হয়।