পাহাড়ে পুলিশের নতুন ইউনিট মাউনটেন ব্যাটালিয়ন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : তিন পার্বত্য জেলায় নিরাপত্তার জন্য মাউনটেন পুলিশ ব্যাটালিয়ন নামে পুলিশে তিনটি নতুন ব্যাটালিয়ন হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই ব্যাটালিয়ন তৈরির নির্দেশনা পেয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। এজন্য ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) ও অর্গানোগ্রাম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এসব তৈরির পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে অনুমোদনের পর পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পুরো প্রকল্প চালু হতে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হতে পারে বলে জানা গেছে। পুলিশে ১৭৭টি ইউনিট আছে। মাউনটেন পুলিশ ব্যাটালিয়ন তৈরি হলে পুলিশের ইউনিট সংখ্যা হবে ১৭৮টি।
এদিকে পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে সন্তু লারমা পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সব ধরনের উদ্যোগে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ছেড়ে আসা ক্যাম্পগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সেখানকার ক্যাম্পগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শান্তিচুক্তির আওতায় সরকার এ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পার্বত্য জেলার শান্তিচুক্তি রক্ষার্থে সেনাবাহিনী যে ক্যাম্প স্থাপন করেছিল সেগুলো তারা ছেড়ে আসছে। ক্যাম্প ছেড়ে এলেও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। সেজন্যই সে ক্যাম্পে আর্মির বদলে পুলিশ মোতায়েন করার জন্য একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বহু মিটিং হয়েছে। এ তিন জেলায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আধুনিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় মাঝে মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেই চলেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, এ জায়গাটায় লক্ষ্য রাখতে। একজন অতিরিক্ত সচিবের মাধ্যমে তিনটি জেলায় কোথায় কী হচ্ছে তার একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও ছিল। মন্ত্রী বলেন, আমাদের যত স্টেকহোল্ডার ছিল তাদের সবার সঙ্গে আলাপ করেছি। একইসঙ্গে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যারা বসেছিলেন, সবার সঙ্গে আমরা বসেছি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
পুলিশের নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি ( ডেভলপমেন্ট) গাজী মো. মোজাম্মেল হক বলেছেন, নির্দেশনা পাওয়া পর ডিপিপি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই ব্যাটালিয়ন তৈরি হলে পাহাড়ীদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিসহ সব বিষয়ে পুলিশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।
জানা গেছে, পাহাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তা বিধান ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতি বাড়াতে মাউনটেন পুলিশ ব্যটালিয়ান করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এর প্রধান হবেন একজন অতিরিক্ত ডিআইজি। তিনটি ব্যাটালিয়নে তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি এর দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ব্যাটালিয়নের জনবল হবে ৮’শ ৫০ জন করে। এই ব্যাটালিয়নে থাকবে না কোনো নারী সদস্য। প্রতিটি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে ১০টি করে ক্যাম্প থাকবে। ওই ক্যাম্প সদস্যরা পর্যায়ক্রমে পেট্রোল টিমের দায়িত্ব পালন করবেন। এর মনোগ্রাম, পোষাকের রঙ, অস্ত্রাগার, ব্যারাক, অফিসার কোয়ার্টার নির্মাণসহ সবকিছু নির্ধারণের কার্যক্রম এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় ১৯৭৩ সালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। তাদের সামরিক সংগঠন ছিল শান্তিবাহিনী। শুরু থেকেই দুটি মতাদর্শে ভাগ হয়ে যায় জনসংহতি সমিতি। মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বে ছিল বামপন্থী লারমা গ্রুপ, অন্যদিকে প্রীতিকুমার চাকমার নেতৃত্বে ছিল জাতীয়তাবাদী প্রীতি গ্রুপ। ১৯৭৭ সালে শান্তিবাহিনী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এরপর সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামকে ২৪তম ডিভিশনের জিওসির অধীনে আনে। পাল্টা হামলা শুরু করে। সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যেই ১৯৭৯ সালে গোষ্ঠী মালিকানাধীন জমিকে খাসজমি ঘোষণা করে সেখানে বাঙালি বসতি স্থাপনের কার্যক্রম নেয় জিয়াউর রহমানের সরকার। উচ্ছেদ হয় বহু পাহাড়ি পরিবার। ১৯৯১ সালে বাঙালির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় মোট জনসংখ্যার ৪৮.৫ শতাংশে, যা ১৯৭৪ সালে ছিল ১১.৬ শতাংশ। আশির দশকে শান্তিবাহিনী সামরিক দিক থেকে সংগঠিত হতে শুরু করে। ১৯৮৩ সালে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হামলায় নিহত হন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তার ছোট ভাই জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) দলের নেতৃত্বে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পার্বত্য শান্তি চুক্তি মতে দুই বছর পর পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা। তবে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়ি থেকে সীমিত পরিসরে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়।