নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হলে হার্ডলাইনে যাবে সরকার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে আন্দোলনের নামে সহিংস সংঘর্ষ, সংঘাতের মাধ্যমে অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হলে হার্ডলাইন বেছে নেবে সরকার। কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আক্রান্ত হলে কোন ধরনের ছাড় না দিয়ে কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-ছাত্রাবাস খোলা, পরীক্ষা সংক্রান্ত্র দাবি ও ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর হামলা ও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ের আলোকে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সারাদেশে আন্দোলনের নামে সহিংস ও সংঘাতের মাধ্যমে অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর ছঁক কষেছে দেশী-বিদেশী চক্র এমনটাই গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পিত নীল নক্সা অনুযায়ী সারাদেশে নাশকতা, নৈরাজ্য ও অরাজকতা ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে লাশ ফেলে আন্দোলনের ইস্যু বানানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারাগারে অসুস্থ হয়ে ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাকের কারাগারে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এবং ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে এই ধরনের নীল নক্সা বাস্তবায়নের জন্য কর্তব্যরত পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং এর আগে পুলিশের পোষাকে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুলিশ হত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত দুইদিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ছাত্রসহ ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অদৃশ্য মহল থেকে উস্কানি দেয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস খোলা, পরীক্ষা পেছানোসহ নানা দাবিতে ছাত্রদের উস্কানি দিয়ে রাস্তায় নামানো হয়। সরকার ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির প্রতি নমনীয়ভাবে বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করায় সফল হয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মধ্যে ছাত্রদের দাবিগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেজন্য একের পর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে। সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে ছাত্ররা রাজপথের আন্দোলন ছেড়ে ঘরে ফিরে যায়। দেশী-বিদেশী চক্রের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। এখন আবার সামনে আনা হয়েছে ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু ও ডিজিটাল আইন বাতিলের ঘটনাটি। কারাগারে তার মৃত্যুর জন্য কারও কোন অবহেলা ছিল কিনা, যদি তার জন্য কারও দায়িত্ব অবহেলা কিংবা কেউ দায়ী ও দোষী হয় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য তদন্তানুষ্ঠানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপরও আন্দোলনের নামে বিএনপি ও ছাত্রদল রাজপথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব ঘটনাগুলোকে সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনার মাধ্যমে ক্রমশ : দৃশ্যমান হচ্ছে দেশী-বিদেশী চক্রের ষড়যন্ত্র বলেই মনে করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কোন ইস্যু খুঁজে না পেয়ে এখন কারাগারে অসুস্থ হয়ে ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনা এবং ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ক্রমশ সরকারবিরোধী আন্দোলন দৃশ্যমান করতে পূর্বপরিকল্পিত উপায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। কেবল বিএনপি নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রেণী পেশার মানুষ এখন নানা ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের এক ফ্ল্যাট ফরমে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। লন্ডন থেকে নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রদলকে মাঠে নামিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের জন্য পুলিশ সদর দফতরের পুলিশের আইজি ড. বেনজীব আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি নেতৃবৃন্দ। বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যথাযথ মর্যাদায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে এবং এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চায়। বিএনপির নেতৃবৃন্দকে করোনাভাইরাসের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করলে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মার্চ মাস আসার একদিন আগে হঠাৎ করেই বিএনপি ও ছাত্রদল রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা এবং ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া করাসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাকে রণাঙ্গনে পরিণত করে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, অতীতে কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে যেই নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নূরুল হক নুরুসহ অন্যান্য যারা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য মাঠে নেমেছেন তারাই এখন আবার ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও জিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে রাজপথে নেমেছেন। নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলনের সময়ে লন্ডন থেকে টেলিফোনে উস্কানি দিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তারেক রহমান যে টেলিফোনে উস্কানি দিয়ে যাদের সঙ্গে কথোপোকথন করেছেন তার অডিও টেপ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
তারেক রহমানের উস্কানিতে কোটা আন্দোলনের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনসহ ঢাবির বিভিন্নস্থানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নাশকতা ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। এখন আবার সেই চেনা মুখগুলোকেই ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদ ও ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর নির্দেশ দেয়ার পর রবিবার রাজপথ রণাঙ্গনে পরিণত করানো হয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের একজন নীতি নির্ধারক বলেছেন, টানা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে একটি সফল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু ছোটখাটো ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। যে ঘটনাগুলো ছোট হলেও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হচ্ছে এবং এই ঘটনাগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করা হলেও এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মনে হচ্ছে। কারণ মাত্র কিছুদিন আগে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরায় প্রচার করানো খবরের শিরোনাম ছিল ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’। অথচ খবরের শিরোনাম যিনি সেই প্রাইম মিনিস্টার বা সরকার প্রধান তার নামে কোন খবর নেই। এমন আজগুবি খবর শিরোনামে সেনা প্রধানসহ যেসব খবর প্রচার করানো হয়েছে তাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরায় প্রচার করানো সংবাদের সঙ্গে বর্তমানে বিএনপি ও ছাত্রদলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।